‘প্রতিদিনই আমরা অনুভব করছি, যেন আমরাই চ্যাম্পিয়ন’- দানি ভিভিয়ানের কথাগুলো যেন স্রেফ নিরেট মন্তব্যই নয়; স্পেন দলের আবহ, খেলোয়াড়দের মনের মধ্যে বয়ে চলা আনন্দ, রোমাঞ্চের স্রোতের বহিঃপ্রকাশও। কিন্তু ফাইনালের নিষ্পত্তি যে বাকি এখনও। সম্ভাব্য প্রাপ্তির হাতছানিতে তাই ভেসে যেতে চাইছে না স্পেন। ইংল্যান্ডকে নিয়ে সতর্কও লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল।
বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আগামী রোববার ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে স্পেন ও ইংল্যান্ড। জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ (৩টি) শিরোপা জয়ী স্পেনের সামনে সুযোগ রেকর্ডটা নিজেদের করে নেওয়ার। টানা দুইবার ফাইনালে ওঠা ইংল্যান্ড প্রথম এই ট্রফির স্বাদ নেওয়ার অপেক্ষায়।
শুরু থেকে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা আর নান্দনিকতার সঙ্গে আগ্রাসী ফুটবলের মিশেলে টানা ছয় জয় তুলে নিয়েছে স্পেন। ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল বাধা দে লা ফুয়েন্তের দল পার হয়েছে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে।
টুর্নামেন্টের ফেভারিট দলগুলোর একটি ছিল ফ্রান্স। তাদের বিপক্ষে স্পেনকে নামতে হয়েছিল মাঝমাঠের নির্ভরতা পেদ্রি, অভিজ্ঞ রাইট-ব্যাক দানি কারভাহাল, সেন্টার-ব্যাক হবাঁন লু নহমাঁকে ছাড়া। শুরুতে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কাও ছিল, কিন্তু চার মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে অপ্রতিরোধ্য যাত্রা ধরে রাখে স্প্যানিশরা।
ওই ম্যাচেই কারভাহাল, লু নহমাঁর অনুপস্থিতিতে রক্ষণে আলো ছড়ান ভিভিয়ান। আথলেতিক বিলবাওয়ের হয়ে গতবারের স্প্যানিশ কাপ জয়ী ২৪ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার চলতি বছরের শুরুতে ডাক পান জাতীয় দলে। বয়সে তরুণ-অনভিজ্ঞ, জার্মানিতে নোঙর ফেলা স্পেন দলে তিনি ছিলেন চতুর্থ সেন্টার-ব্যাক।
ফ্রান্স ম্যাচে ৩৮ বছর বয়সী হেসুস নাভাস যখন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের ঝুঁকিতে, তখন ভিভিয়ানকে নামান স্পেন কোচ। স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ এবং ব্যাক টু ব্যাক ২০০৮ ও ২০১২ ইউরো জয়ী নাভাসের শুন্যতা পূরণের ভার কাঁধে তুলে নেন এই তরুণ। বল দখলের প্রতিটি চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়ে দেখান নিজের সামর্থ্য।
চারটি ভয়ঙ্কর আক্রমণ থেকে দলকে রক্ষা করেন ভিভিয়ান। তার ৮৩ শতাংশ পাস ছিল সফল। তাতে মরিয়া ফ্রান্সকে পরে বাগে আনতে সক্ষম হয় স্পেন। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এই তরুণ মেলে ধরলেন দলীয় ঐক্যের প্রসঙ্গ।
“দিন শেষে আমরা সবাই সার্বিক ভালোর জন্য কাজ করি। সবার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে এবং এটা ভালো দিক যে, সবাই তাদের ভিন্ন ভিন্ন সামর্থ্য দেখাচ্ছে, কিন্তু সবাই একই ছক অনুসরণ করছে, যাতে সবকিছু ঠিকঠাক হয়। এখানে সবাই ম্যাচে নিজেদের ভূমিকাটা জানে।”
“কী হতে পারতো, তা নিয়ে আমরা বেশি কিছু ভাবার চেষ্টা করছি না। বরং আমাদের সামনে যা আছে, দৈনন্দিন কাজ এবং প্রতিটি ম্যাচ ফাইনাল ধরে যথাযথভাবে প্রস্তুতি নেওয়া- সেগুলো করছি। যখন হাতে সময় থাকে, তখন বিষয়গুলো কল্পনার চেষ্টা করি; বিশ্রাম নেওয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতায় থাকার চেষ্টা করি।”
স্পেন দলে বাস্ক অঞ্চল থেকে আসা সাত খেলোয়াড়ের একজন ভিভিয়ান। এই অঞ্চল থেকে আসার সুবাদে কোচ দে লা ফুয়েন্তের সাথে তার যোগাযোগটাও বেশ ভালো। এই সংযোগের আরেকটি কারণ, ভিভিয়ানের ক্লাব আথলেতিক বিলবাওয়ের খেলোয়াড় ছিলেন দে লা ফুয়েন্তেও। বিলবাওয়ের রক্ষণে সোনালী সময়ও কাটিয়েছেন তিনি। ১৯৮৪ সালে লিগ ও কাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন লা ফুয়েন্তে।
কয়েক মাস আগে কোপা দেল রে জিতে ৪০ বছরের সাফল্য খরা কাটানো বিলবাও দলের সদস্য ভিভিয়ান, উনাই সিমোন ও নিকো উইলিয়ামস। অবশ্য এত সংযোগ নয়, দলের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকা বোঝাতে ভিভিয়ান টানলেন দারুণ উদাহরণ; সেখানে অবশ্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল নিয়ে সতর্কতার সুরও থাকল কিছুটা।
“আদর্শিক দিক ছাড়াও ফুটবলের প্রতি একই আবেগ আমরা সবাই অনুভব করি। প্রতিদিন আমরা বিজয়ী অনুভব করি; কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমরা মনে করি এরই মধ্যে ইউরো জিতে গিয়েছি।”
“আমাদের ধাপে ধাপে, একটি করে দিন ধরে এগুতে হবে। আমরা সবাই যেটা পেতে চাই, তা অর্জনের জন্য নিজেদের মতো কাজ করি এবং আমরা সেই লক্ষ্য থেকে এক ধাপ দূরে।”
বিষয় : আন্তর্জাতিক ফুটবল স্পেন ইউরো ২০২৪ ইংল্যান্ড
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh