শেষ মুহূর্তে জয়ের পর বাংলাদেশের মেয়েদের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত
২-২ ড্র ধরে নিয়ে দর্শকেরা তখন নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। রেফারি কখন শেষ বাঁশি বাজাবেন, সেই অপেক্ষা শুধু। ঠিক তখনই স্তব্ধ কিংস অ্যারেনা জাগিয়ে তোলেন তৃষ্ণা রানী। উমেলা মারমার ক্রস নেপালের জালে ঠেলে দিয়েই উল্লাস, তাঁর সঙ্গে উদ্যাপনে যোগ দেন সতীর্থরাও। সাফ অনূর্ধ্ব–২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ৩-২ গোলে জিতেই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে ৯ গোলের উৎসব করা বাংলাদেশকে আজ বেশ ভুগিয়েছে নেপাল। তারপরও প্রথমার্ধে দুবার গোল উদ্যাপন করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। দ্বিতীয়ার্ধে এলোমেলো রক্ষণ আর আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা মোসাম্মৎ সাগরিকা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত তৃষ্ণা মেটালেন গোলের তৃষ্ণা।
ম্যাচ শুরুর তিন মিনিটের মধ্যে দুবার কর্নার পায় বাংলাদেশ। কিন্তু কোনোটিই কাজে লাগাতে পারেনি মেয়েরা। চতুর্থ মিনিটে ডান পাশ ধরে আক্রমণে ওঠা বাংলাদেশের পূজা দাসের লম্বা শট পোস্টের পাস দিয়ে চলে যায়। অষ্টম মিনিটে জয়নব বিবির লং শট কোনোমতে আটকে দেন নেপালের গোলকিপার সুজাতা তামাং। এভাবে নিয়মিত প্রতিপক্ষকে চাপে রেখে ১৩ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। বক্সের বাঁ পাশ থেকে সাগরিকার বাড়ানো বল পেয়ে জটলার মধ্যে থেকেই শট নেন মুনকি আক্তার। কিন্তু তাঁর শটে তেমন জোর না থাকায় প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন। সেই বল ডান পাশে ফাঁকা পেয়ে ফিরতি শটে জালে জড়ান সিনহা জাহান শিখা। চলমান সাফে যেটা তাঁর দ্বিতীয় গোল।

বাংলাদেশের মেয়েদের জয়ের আনন্দ। ছবি: সংগৃহীত
নেপালও ছেড়ে কথা বলেনি। এক গোল হজমের পর আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় তারা। তবে একাধিক সুযোগ নষ্ট করে এবং বাংলাদেশের জমাট রক্ষণের কারণে বারবার গোলমুখে হতাশ হতে হয়েছে নেপালের ফুটবলারদের। ২৭ মিনিটে আনিশা রায়ের ফ্রি-কিক আটকে যায় গোলপোস্টে। এর এক মিনিট পর নেপালের আরেকটি চেষ্টা ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের গোলকিপার স্বর্ণা রানীর দক্ষতায়।
৩৬ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যবধান দ্বিগুণ করে সাগরিকার গোলে। শান্তি মার্ডির ক্রস ডি-বক্সে পেয়ে শট নেন শিখা, কিন্তু তাঁর শট সরাসরি প্রতিপক্ষ গোলকিপারের গায়ে লেগে ফিরে আসে। শিখার ফিরতি শট আবার সেই গোলকিপারের গায়ে লেগে দিক বদলায়। সেই বল ফাঁকায় পেয়ে সাগরিকা আর ভুল করেননি, নিখুঁত শটে নেপালের জাল কাঁপান। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন এই ফরোয়ার্ড।
-6873ded73f255.jpg)
বিরতির পর ম্যাচের ৫৫ মিনিটে মেজাজ হারিয়ে হাতাহাতিতে জড়ান বাংলাদেশের সাগরিকা ও নেপালের সিমরান রায়। ছবি: সংগৃহীত
বিরতির পর ম্যাচের ৫৫ মিনিটে মেজাজ হারিয়ে হাতাহাতিতে জড়ান বাংলাদেশের সাগরিকা ও নেপালের সিমরান রায়। শাস্তি হিসেবে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন দুজনই। ফলে দুই দলই ম্যাচের বাকি সময়টা খেলে ১০ জন নিয়ে। সাগরিকা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর বাংলাদেশের আক্রমণভাগ খানিকটা ঝিমিয়ে পড়ে। শেষদিকে পাঁচ-ছয়টা যোগ পেয়েও তাই কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিকেরা। উল্টো ৭৬ মিনিটে গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হন নেপালের মিনা দেউবা। রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি। সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমান নেপালের আনিশা রায়। ৮৭ মিনিটে বাংলাদেশের এলোমেলো রক্ষণের সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগায় নেপাল। পূর্ণিমা রায়ের ক্রসে পা লাগিয়েই উদ্যাপনে মাতেন মিনা, ম্যাচে ২-২ সমতা ফেরে। তারপর শেষ মুহূর্তে তৃষ্ণার ওই গোলে বাংলাদেশের উল্লাস!
বড় জয়েই টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ। গত শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জিতেছিল ৯-১ গোলে। একই দিন ভুটানকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে ৩ পয়েন্ট তুলে নেয় নেপালও। আজ নেপালকে হারানোয় দুই ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট হলো বাংলাদেশের মেয়েদের।
-6873df070795d.jpg)
শেষ মুহূর্তে গোল করে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন তৃষ্ণা। ছবি: সংগৃহীত
পাঁচটি দেশ এই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভারত নাম প্রত্যাহার করে নেয়। সে জন্য বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান—এই চার দেশ নিয়ে শুরু হয়েছে সাফের এ আসর। টুর্নামেন্টের ফরম্যাটেও এসেছে পরিবর্তন। এখন চার দল রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে একে অন্যের সঙ্গে দুবার করে খেলবে। একটি দল ছয়টি করে ম্যাচ পাবে। সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাওয়া দল হবে চ্যাম্পিয়ন। পয়েন্ট সমান হলে প্রথমে দেখা হবে মুখোমুখি লড়াইয়ের ফল, তারপর গোল ব্যবধান।
বয়সভিত্তিক সাফে বাংলাদেশের সাফল্য অনেক। সর্বশেষ ২০২৪ সালে এই প্রতিযোগিতায় ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় লাল-সবুজের দল। এখন পর্যন্ত হওয়া পাঁচ আসরে চারবারই শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
