ঊ ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে বরিশাল ও চিটাগংয়ের অধিনায়ক। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে শেষ মুহূর্তে অনেক কিছু হয়ে যায়। সে জন্য আগে থেকে সমালোচনা করতে নেই। একেবারে শেষ বেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর দেখবেন আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলে আপনি যেটা চেয়েছেন, সেটার কাছাকাছি কিছু একটা হয়ে যাচ্ছে।
হয়, তবে একটু জল ঘোলা করে। কখনো কখনো গোঁজামিল দিয়েও। আপনি তখন না পারবেন সইতে, না পারবেন কইতে। হয়ে তো গেছে! মেনে নেওয়াটাই একমাত্র গতি। ২০১১ বিশ্বকাপ ও ২০১৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে সেটাই দেখা গেছে। বিপিএলও আমাদের প্রতিবছর যেনতেনভাবে শেষ করার এই শিক্ষা দিয়ে যায়।
গতকালের কথাই ধরুন। আজ ফাইনাল, তার আগের দিন দুই অধিনায়ক ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন করবেন, এটাই রীতি। গতবার তো এই অনুষ্ঠান বেশ ঘটা করেই হয়েছিল আহসান মঞ্জিলে। এবার ফাইনালের আগের বিকেল পর্যন্তও সে রকম কোনো উদ্যোগ ছিল না বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের।
এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তামিম ইকবালের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নও হলো। বিপিএলকে শেষ বেলায় এসে আর বিতর্কিত না করতে বরিশাল অধিনায়ক দিলেন ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ জাতীয় উত্তর। তবে অনুচ্চারে বলে দিয়েছেন, এগুলো আগে থেকে পরিকল্পনা করে করলে ভালো হয়। সংবাদ সম্মেলনের পর তামিমকে রসিকতা করে বলা হলো, রাতে কিন্তু ফটোসেশন হতেও পারে। শুনে চমকে উঠে তিনি বলেছেন, ‘আজকে!’ শেষ পর্যন্ত রসিকতাই সত্যি হয়েছে। বিসিবির বিকেলে দেওয়া বার্তা অনুযায়ী বনানীর যে হোটেলে ফাইনালের দুই দল থাকছে, রাতে সেখানে ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন হয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ৪০ দিনের একাদশ বিপিএল ফরচুন বরিশাল–চিটাগং কিংস ফাইনাল দিয়ে শেষ হচ্ছে আজ রাতে। ঢাকা–সিলেট–চট্টগ্রাম–ঢাকায় এই ৪০ দিনে ও রকম কত কী ঘটে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হচ্ছে শেষের আনুষ্ঠানিকতা। যাতে খেলা ছাড়াও থাকবে ম্যাচের ফাঁকে ফাঁকে ঢোল–বাদ্যির তালে গানবাজনা। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া তামিম ইকবালের হাতে বিসিবির পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হবে বিদায়ী সম্মাননা।
৪০ দিনে খেলা হলো, রানের ফোয়ারা ছুটল, সেঞ্চুরি দেখা গেল ৮টি, ব্যাটিং উইকেটেও বোলাররা ম্যাচ জেতালেন অনেক সময়, রোমাঞ্চকর অঘটন ঘটেছে, বড় দল বাদ পড়েছে, গ্যালারি পূর্ণ থেকেছে গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকিট কেনা দর্শকে। মোটকথা, একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের কাছে আপনার যা কিছু দাবি, তার অনেকটাই এবার পূরণ করেছে মাঠের বিপিএল।
ফাইনালের জন্যই কিউই অলরাউন্ডার জিমি নিশামকে উড়িয়ে এনেছে ফরচুন বরিশাল। ছবি: সংগৃহীত
কিন্তু মাঠের বাইরে যথারীতি হযবরল। বিসিবির ব্যবস্থাপনা বদলেছে, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলে পরিবর্তন এসেছে। তবু বিশৃঙ্খলা কমেনি। একটা গোছানো বিতর্কমুক্ত টুর্নামেন্ট করা যায়নি এবারও। এটাও ঠিক যে বর্তমান বোর্ডে রদবদলের পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে মাঠে নামানো হয়েছে টুর্নামেন্টটা। খেলোয়াড়দের দাবি ছিল কম টাকায় হলেও তাঁরা বিপিএল খেলতে চান। বোর্ডও চেয়েছে টুর্নামেন্টটা হোক। পুরোনো দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজির অনুপস্থিতি সত্ত্বেও দ্রুততম সময়ে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে মাঠে নামানো হয় টুর্নামেন্ট। জুলাই–আগস্টের চেতনাকে ধারণ করে চেষ্টা হয়েছে বিপিএলে ভিন্ন আঙ্গিক আনার।
কিন্তু তড়িঘড়ি করে, কাটছাঁট এনে বিপিএল করবেন; তারপর সেটা কুসুমাস্তীর্ণ পথে এগিয়ে সুন্দরভাবে শেষ হয়ে যাবে, তা তো হবে না! মাঠের খেলার সমান্তরালে তাই চলতে থাকল একটার পর একটা বিতর্ক। এক দুর্বার রাজশাহীই তাতে রাখল ‘দুর্বার’ ভূমিকা। কী কী হয়েছে, সবই সবাই জানেন। ফাইনালের আগে সেদিক আর ফিরে না–ই বা তাকালেন। তা ছাড়া কাল সংবাদ সম্মেলনে এসে ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবালও বিপিএলের ভুলত্রুটিগুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘অনেক কিছু হয়তো করা যেত, এসব নিয়ে সারাক্ষণই বিতর্ক করতে পারি। কিছু ভালো হয়েছে, মাঠের ক্রিকেট ভালো হয়েছে। আবার অনেক গ্যাপ আছে, যেগুলো পূরণ করতে হবে। দিন শেষে এটা আমাদের টুর্নামেন্ট, নিজেদের টুর্নামেন্ট। আমাদের সামনে সুযোগ থাকবে আরও ভালো করার।’
বিপিএলের বিদায়ী ভাষণ হিসেবে তামিমের কথা ঠিক আছে। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সদস্যসচিব নাজমূল আবেদীন ফাহিম; তাঁরাও নিশ্চয়ই শেষ বেলায় এসে একই কথা বলবেন। আশা দেখাবেন, আগামী বিপিএল ভালো হবে। বিতর্কমুক্ত হবে। নিয়ম–শৃঙ্খলা মানা হবে।
বিপিএল ১১ মৌসুম পার করল, প্রতিবার প্রায় একই রকম বিতর্ক এবং শেষে একই রকম আশা নিয়ে। দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নিয়ে সমস্যা, স্থানীয়–বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না পাওয়ার অভিযোগ, স্পট ফিক্সিংয়ের বিষবাষ্প—এগুলো না হলে যেন টুর্নামেন্টটা জমেই না! সঙ্গে যোগ হয় নতুন নতুন বিতর্ক। তাতে কি? বিপিএল তো আরও একবার শেষ হয়েই যাচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh