সাকিব আল-হাসান
অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন সাকিব আল হাসান। ছাত্র আন্দোলনে নীরব থাকা নিয়ে নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে রাজনীতিতে জড়ানো নিয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন টাইগার এই অলরাউন্ডার।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আর বিলুপ্ত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন ক্রিকেটার সাকিব। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সংসদ সদস্যের পদ খোয়াতে হয় তাকে।
ছাত্র আন্দোলনে নীরব থাকা সাকিবের নামে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দেশে হয়েছে হত্যা মামলাও। দেশে এলে হয়তো গ্রেফতার হতে পারেন সাকিব। যে কারণে ভারত সফরে টেস্ট সিরিজ শেষেই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন সাকিব।
আজ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দীর্ঘ এক পোস্টে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন সাকিব। প্রথমেই আন্দোলনে মারা যাওয়াদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, আসসালামু আলাইকুম, আমার দেশের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা। আমার প্রতি আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা আমাকে আজকের এই সাকিব আল হাসান হিসেবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করেছে। শুরুতেই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেসব আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। যদিও স্বজনহারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোনো কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোনো কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়।
ছাত্র আন্দোলনে নিজের নীরব ভূমিকার দায় নিজের মাথায় পেতে নিয়ে সাকিব বলেন, এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম।
রাজনীতিতে জড়ানোর ব্যাখ্যায় সাকিব বলেন, আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোনো দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন। আর আমার এই এলাকার উন্নয়ন করতে চাওয়া আমাকে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী করে। যাই হোক দিনশেষে আমার পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার। আমি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থেকেছি অন্তর থেকে ক্রিকেটকেই ধারণ করেছি।
তিনি আরও লিখেছেন- এই ক্রিকেটকে ধারণ করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সম্মান অর্জন করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আপনারা। আপনাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে আজকের সাকিব আল হাসান বানিয়েছে। আমি যখন দেশের জন্য ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট ধরেছি তখন আমার সাথে ব্যাট ধরেছেন আপনারা সবাই। গ্যালারি থেকে আপনাদের চিৎকার, আপনাদের সমর্থন আমাকে ভালো খেলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ক্রিকেট ম্যাচের দিন চায়ের দোকানে টেলিভিশনের সামনে উপচেপড়া ভিড় আমাকে শক্তি জুগিয়েছে। আমি জিতলে আপনারা সবাই জিতেছেন। আমি হেরে গেলে হেরে গেছেন আপনারা সবাই।
দেশের মাটিতে সাদা পোশাকে শেষ ম্যাচ খেলার আকুতি জানিয়ে সাকিব বলেন, আপনারা জানেন, খুব শীঘ্রই আমি আমার শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজকের সাকিব আল হাসান হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই পুরো জার্নিটাকে ড্রাইভ করেছেন আপনারা। ক্রিকেটের এই গোটা গল্পটা আপনাদের হাতেই লেখা! তাই আমার শেষ ম্যাচে, এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে, আমি আপনাদের পাশে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিদায় নিতে চাই। বিদায় বেলায় সেই মানুষগুলোর হাতে হাত রাখতে চাই, যাদের হাতের তালি আমার ভালো খেলতে বাধ্য করেছে। বিদায় বেলায় সেই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখতে চাই, আমার ভালো খেলায় যাদের চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। আবার আমার খারাপ খেলায় যাদের চোখ ছলছল করেছে।
আমি আশা করি, শুধু আশা না বিশ্বাস করি– এই বিদায় বেলায় আপনারা সবাই আমার সঙ্গে থাকবেন। সবাই সঙ্গে থেকে সেই গল্পের ইতি টানবেন, যে গল্পের নায়ক আমি নই, আপনারা!
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh