× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কোটাবিরোধীদের অন্য ‘দূরভিসন্ধি’ আছে, সংস্কার চায় না : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

১৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৩২ এএম । আপডেটঃ ১৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৩ এএম

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত| ছবি—সংগৃহীত

কোটাবিরোধীরা কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চায় না, তাদের অন্য কোনো দূরঅভিসন্ধি আছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

শনিবার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কোটা আন্দোলন এবং সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

তথপ্রতিমন্ত্রী বলেন, “আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় দাবি পরিবর্তন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আছে- নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা। এগুলো কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে ধারণা না থাকলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

“আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রের একেক অঙ্গের কাছে একেক দাবি জানাচ্ছে, এখানে তাদের সম্মুখ ধারণার অভাব আছে মনে হচ্ছে।”

কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করায় এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষিত তরুণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিটি কর্মদিবসে কোনো দিন সড়ক ও কোনো দিন সড়কের পাশাপাশি রেলপথও অবরোধ করেন তারা।

এরই মধ্যে প্রকাশ হয়েছে হাই কোর্টের রায়ের বাস্তবায়নযোগ্য আদেশ, যেখানে কোটা বহাল রেখে প্রয়োজনে তা সংস্কারে সরকারকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া আপিল বিভাগে হাই কোর্টের রায়টি চার সপ্তাহের জন্য ‘স্থিতবস্থা’ দেওয়া হয়েছে।

এ মামলায় কোটা সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীরা পক্ষভুক্ত হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, অন্যান্য সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীও মামলায় পক্ষভুক্ত হতে পারেন, আদালতের দরজা তাদের জন্য সব সময় খোলা।

তবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে’ নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, সংসদে আইন করে অনগ্রসর জানগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে ‘বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক’ কোটা বাতিলের এক দফা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ছুটির দিন শুক্রবারও তারা ঢাকায় অবরোধ কর্মসূচি রাখে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে রোববার নতুন কর্মসূচি দিয়েছে। এ দিন বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা এসেছে।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত ঘটনা প্রবাহের ওপর তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলছেন, প্রথমে কোটা আন্দোলনকারীরা হাইকোর্টে বাতিল হওয়া সরকারের পরিপত্র পুর্নবহালের দাবি করেছে। তবে এটি পুনর্বহালের ক্ষমতা শুধু বিচার বিভাগের। হাই কোর্টের আদেশ রাস্তার আন্দোলনে পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নাই।

“রাস্তায় আন্দোলন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে, সেই সুযোগ হয়ত আছে। পরিপত্র বাতিলের কারণে সায়মিকভাবে কিছু ক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে বা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আন্দোলনে নামার পেছনে যৌক্তিকতা থাকতে পারে।”

তিনি বলেন, “রায় পরিবর্তন করতে হলে সর্বোচ্চ আদালতে যেতে হবে। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপিলও করেছে, আইনি লড়াই শুরু করেছে। তখন সরকারের অবস্থান এবং আন্দোলনকারীদের অবস্থান একই হয়ে গেল। আন্দোলনকারীরা তাদের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগও করেছেন, সরকারের সঙ্গে পক্ষভুক্তও হয়েছে।”

আন্দোলনকারীরা পরে সরকারের কাছে কমিশন গঠনের দাবি করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকার আপিল করে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করায় কমিশন গঠনের সুযোগ নেই। এমন কি ঘোষণা দেওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, এটা অসাংবিধানিক। তারা সেই অসাংবিধানিক দাবি করতে শুরু করল। এর মধ্যেই সরকার পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে চার সপ্তাহের স্থিতিতাবস্থার আদেশ আনতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পতিপত্র পুনর্বহাল হয়ে গেছে। হাই কোর্টের আদেশের আর কার্যকারিতা নেই, সেটিও বলা হয়েছে। ফলে উচ্চ আদালতের প্রাথমিক আদেশে আন্দোলনকারীদের দাবি চার সপ্তাহের জন্য পুরণ হয়ে গেছে।”

সুপ্রিম কোর্টও বলেছে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য শোনার জন্য ‘দরজা সব সময় খোলা’ থাকবে। সেই প্রসঙ্গ টেনে আরাফাত বলেন, “রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ (সরকার) যখন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মীমাংসার দিকে এগোচ্ছে, তখন আন্দোলনকারীরা আবার তাদের দাবি পরিবর্তন করে বলতে শুরু করেছে বিচার বিভাগ নয়, নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে সমাধান চাই।

“অথচ আইনি প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ না করে সরকার এ বিষয়ে কোনো কিছুই করতে পারবে না, সেটি আমরা সবাই জানি। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে সরকার আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দিতে পারে না। কমিশন গঠনসহ এসব বলার অর্থ- আপনি অসাংবিধানিক কাজ করছেন।”

কোটা বিষয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি আদালত বা সংসদের বিষয় নয়। সর্বশেষ হাইকোর্টের আংশিক রায়ে দেখা গেল, আদালত কোটা সংস্কারের জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। তখন আন্দোলনকারীরা আবার দাবি পরিবর্তন করে বলছে, সংসদ বা আইনসভাকে আইন করতে হবে। প্রথমে আদালতের কাছে, তারপর নির্বাহী বিভাগের কাছে; আর এখন দাবি সংসদের কাছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি বারবার পরিবর্তন হচ্ছে কেন প্রশ্ন রেখে তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, এতে প্রমাণিত হয়, তারা কোনো বিষয় নিয়ে ভালোভাবে জ্ঞাত নয়।

“সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের মাধ্যমে সরকারি পরিপত্র পুনর্বহাল হওয়ার পর, আন্দোলনকারীদের দাবি প্রাথমিকভাবে পূরণ হওয়ার পর এবং তাদের মৌলিক দাবি ও সরকারের অবস্থা একই হওয়া স্বত্ত্বেও যারা বারবার দাবি পরিবর্তন করে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং এখনও আন্দোলনের নামে জাদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, আমি মনে করি তারা কোটা পদ্ধতির সংস্কার চায় না; তাদের অন্য কোনো দূরঅভিসন্ধি আছে।”

পৃথিবীর সব দেশে কোট ব্যবস্থা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশে কোটায় যারা চাকরি পাচ্ছেন তাদের আগে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হচ্ছে। বিষয়টি এমন নয় যে, তাদের ঘর থেকে ডেকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে।

কোটার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বক্তব্য, পঁচাত্তরের পর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার দীর্ঘদিন নির্যাতন, বৈষম্য ও স্বাধীনতাবিরোধীদের কাছ থেকে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। ফলে এখনও চাকরিতে কোটা থাকাটা ন্যায্য। সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর মুখেও শোনা গেল তেমন কথা।

তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তাদের সন্তান, পরিবার ও উত্তরসূরিরাও দীর্ঘদিন বৈষম্য, বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। যারা এমন বঞ্চনার শিকার হয়েও মেধা তালিকায় ঢুকেছে, তাদের কীভাবে কম মেধাবী বলবেন? এটা তো অন্যায্য কথা।

“বৈষম্য দূর করার জন্য কোটার প্রয়োজন। সারা জীবন যে বৈষম্যটা তাদের সঙ্গে হয়ে এসেছে, এটা দূর করতে হবে শেষ মাথায় এসে। কোটা বৈষম্য তৈরি করে না।”

কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে রাস্তায় নেমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করতে সরকারের মন্ত্রীদের পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা একদিকে যেমন অনুরোধ করছেন, অন্যদিকে হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন। তাদের মত এবার তথ্য প্রতিমন্ত্রীও সতর্কতা উচ্চারণ করলেন।

সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে যে জাদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে, সেই দুর্ভোগ নিরসনে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইল তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কোনো আন্দোলনে যৌক্তিকতা থাকলে, তা দুর্ভোগ সৃষ্টি করলেও জনগণ মেনে নেয়। কিন্তু আজ যখন স্পষ্ট হয়ে গেলে, আন্দোলনকারীদের দাবির পক্ষেই সরকার আইনি লড়াই করছে, সরকারই আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে পক্ষভুক্ত হয়েছে, তখন আন্দোলনের নামে রাস্তা বন্ধ করে জাদুর্ভোগ তৈরি করা একেবারেই অযৌক্তিক।

“কোনো আন্দোলন কখনও সফল হয় না, যদি এর যৌক্তিক ভিত্তি না থাকে। সরকারের দায়িত্ব জাদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া। গায়ের জোরে পাহাড় ঠেললে সরকারকে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।”

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.