ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, 'আমি বলতে চাই যারা ধনী সামর্থ্যবান তাদের কর জালে আনেন। দাগী বড়লোকদের গলায় পা দিয়ে কর দিতে বাধ্য করেন। দাগী ঋণ খেলাপিদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নিয়ে তড়িঘড়ি করে একটা ব্যবস্থা করেন। উপজেলায় রাজস্ব অফিস নেই কেন? একটা ইউনিয়নে পাঁচটা গ্রোথ সেন্টার আছে। ইউনিয়নে যারা স্থায়ী দোকান নিয়ে ব্যবসা করে তাদের করজালে আনেন। সেখানে লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব বাড়াতে পারেন।'
রোববার (৯ জুন) প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) আয়োজিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পর্যালোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ইনু বলেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের যে ধাক্কায় আমরা বিপর্যস্ত এবং বাজারে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য ডলার সংকট, সুদের হারের গণ্ডগোল, ব্যাংকের বিশৃঙ্খলা, রাজস্ব আনয়নে ধীরগতি এবং সমগ্র অর্থনীতিতে যে অনাস্থা ভাব ও অর্থনীতিতে যে শাসন প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে সবকিছু মিলিয়ে একটা অর্থনৈতিক সংকটের ভেতরে একটা সময় পার করছি। সেই ধাক্কা সামলানোর বাজেট আমরা আশা করেছিলাম। এই বাজেটে অর্থমন্ত্রী সব সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু আমি যখন পাতার পর পাতা দেখি তখন এর কোনো সমাধান খুঁজে পাই না। শুধু কিছু বরাদ্দের হেরফের দেখি আর কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, এটা ছিল ধাক্কা সামলানোর বাজেট। সুতরাং এটাকে আমি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বাজেট বলব। কিন্তু এবার যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে, সেটার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আমাদের দরকার মূল্যস্ফীতি কমানো। সবাই জানে যে বেশি টাকা খরচ করলে বাজারে টাকা যাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। প্রবৃদ্ধি বেশি না বাড়িয়ে প্রকল্প কাটছাঁট করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা খাতে টাকা বাড়িয়ে মানুষের মধ্যে স্বস্তি আনা যেত। উন্নয়নের এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে লোক দেখানো ফুটানি। জাসদ সভাপতি বলেন, তাই আমরা মনে করছি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের জন্য ক্রাইসিস স্টেপ লাগে। একই সঙ্গে বলব অর্থনীতির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক আছে। আপনি বলছেন আধুনিক অর্থনীতি চাই, আরেক পক্ষ বলছে এখানে তালেবানি শাসন চাই। আধুনিক অর্থনীতি চান আবার বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে মিছিল এলাও করছেন। এটা কী? এভাবে কি চলবে বাংলাদেশ? আপনি আধুনিক শিক্ষা নীতি করতে দেবেন না, তাহলে আধুনিক অর্থনীতি কীভাবে হবে?
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের পরিচালক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এখন আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের অনেক মুদি দোকানেও বছরে কোটি টাকার লেনদেন হয়। তাই আমাদের এখন উপজেলা পর্যায়েও কর অফিসগুলো নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন এসেছে। তিনি আরও বলেন, বাজার ব্যবস্থার সংশোধন ছাড়া মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না। তাই আমাদের বাজার নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য আরও ব্যয় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিকরা যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার আনেন তার থেকে কিন্তু বেশি বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার আনেন প্রবাসী শ্রমিকরা। তাই এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন আছে।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট মানে আতঙ্ক। সাধারণ মানুষ কোন জিনিসের দাম কতটুকু বাড়বে, তাদের জীবনযাপন ব্যয় কতটুকু বাড়বে এগুলো নিয়ে চিন্তিত৷
এ সময় তিনি বাজেটের ঘাটতি ৪.৫ শতাংশ থেকে ৩.৫ শতাংশ নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কাটছাঁট করা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয় নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করা, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার রোধে রাজস্ব বোর্ডের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে শক্তিশালী করা, ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা, রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে ও ডলার সংকট কাটাতে বেসরকারি-ব্যক্তি খাতে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সাথে উৎপাদন হোক বা না হোক ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার চুক্তি সংশোধন করে 'নো প্রোডাকশন নো চার্জ' চুক্তি করা, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধ করা, সামাজিক সুরক্ষা বাস্তবায়ন, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণে জিডিপির ২ শতাংশ ও জাতীয় বাজেটের ৮ শতাংশ বরাদ্দ এবং মোবাইল ফোনের টকটাইম-ইন্টারনেট ডাটার উপর শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান।
বিষয় : রাজনীতি জাসদ হাসানুল হক ইনু
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006 ,01922575574
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
