বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা এতদিন নির্বাচন নির্বাচন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন, তারা এখন ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। তিনি দাবি করেন, এই নেতারা বুঝতে পেরেছেন, তাদের 'অপকর্মের' কারণে বাংলাদেশের জনগণ আগামী নির্বাচনে তাদের লাল কার্ড দেখানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন।
শনিবার (৬ নভেম্বর) সিলেট নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান এই মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তাদের চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব এবং জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য কঠোর সমালোচনা করেন।
চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের রাজনীতি
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে ইঙ্গিত করে জামায়াত আমির বলেন, "একদল চাঁদাবাজির কারণে জনগণের ঘৃণা কুড়িয়েছে, আরেক দল আবার তার চেয়ে বেশি শক্তি নিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। একদল দখলদার বনতে গিয়ে জনগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আরেক দল বেপরোয়া দখলদার হয়ে উঠেছে।"
তিনি আরও বলেন, একদল জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, "আরেক দল একই পথ ধরেছে, এমনকি নিজেদের মধ্যে মারামারিতে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে।"
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'অপকর্মের' দায় নিয়ে ফ্যাসিস্টরা বাংলাদেশ থেকে পালালেও, ফ্যাসিজমের কালো ছায়া দেশ থেকে দূর হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, একদল যে অপকর্ম করে গিয়েছে, আরেক দল সেই অপকর্মের দায়িত্ব নিয়েছে।
নির্বাচনের 'ক্রেডিট হাইজ্যাক' করার যেকোনো চেষ্টার বিষয়ে সতর্ক করে জামায়াত আমির বলেন, "কেউ যদি চিন্তা করেন জনগণের সমর্থন পাব না, তাহলে বাঁকা পথে প্রশাসনিক ক্যু-এর মাধ্যমে আমরা নির্বাচনের ক্রেডিট হাইজ্যাক করব, তাঁদের বলব, বন্ধু সেই সূর্য ডুবে গেছে, এই সূর্য আর বাংলাদেশে উঠবে না।"
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশে এখন নতুন সূর্যের উদয় হবে, "সেই সূর্য কোরআন বুকে নিয়ে উদিত হবে ইনশা আল্লাহ। বাংলাদেশ থেকে অপশাসন দূর হবে।"
আট দলের জোটের পাঁচ দাবি
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি—এই আট দল জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশবাসী আশা করেছিল, অতীতের অপকর্মের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতিবিদরা নতুন রাজনীতি শুরু করবেন। কিন্তু তিনি দুঃখের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছেন, একদল সেই পুরোনো ধারায় পড়ে আছে।
তিনি বলেন, তারা "কোনো সংস্কারে রাজি না, তারা সনদ বাস্তবায়নে রাজি না, তারা গণভোটেও প্রথমে রাজি ছিল না। তারপর ধাক্কায়-ধুক্কায় সেই গণভোট এক দিনেই হতে হবে, তা তারা বাধ্য করেছে সরকারকে।"
জামায়াত আমির আট দলের বাইরে থাকা অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকে "সব ধরনের মোহের জাল ছিন্ন করে" এই জোটে আসার আহ্বান জানান।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, যারা ৫৩ বছর ধরে দেশকে জিম্মি করে রেখেছিলেন, তারা নিজেরাই নিরাপদ নন। তারা এখন নির্বাচন পেছানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ইসলামপন্থীরা ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন ও জুলুমের শিকার হয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, জুলাই সনদের বিপক্ষে যারা 'না বাক্সের' জন্য প্রচার চালাবে, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, "বিশ্বের সকল শান্তিকামী সভ্য দেশকে আমরা সম্মান জানাই। কিন্তু কেউ যেন আমাদের কোনো দাদাগিরি করতে না আসেন। বাংলাদেশ চলবে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মোতাবেক এই দেশের জনগণের পছন্দে।"
সিলেটের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারা দেশে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হলো। সমাবেশে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত সভাপতিত্ব করেন।
পাঁচ দফা দাবিতে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে একতাবদ্ধতার প্রতীক হিসেবে হাতে হাত উঁচিয়ে ধরেন জামায়াতে ইসলামীসহ জোটভুক্ত দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা। ছবি: সংগৃহীত
বিষয় : খেলাফত মজলিস সমাবেশ সিলেট বিভাগ সিলেট
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006 ,01922575574
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
