দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনে সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংলাপে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে দলটি।
নিবন্ধন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে প্রথম সংলাপে অংশ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রণীত নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগ করার সামর্থ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। দলটি সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে, বিএনপির প্রার্থীরা যদি দলের বর্তমান প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার পরিবর্তে তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করেন, তবে ইসি সেই বিধিমালা প্রয়োগ করে তা ঠেকাতে পারবে কি না। এনসিপি এই আচরণবিধিকে নির্বাচনী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও মন্তব্য করেছে।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিবন্ধিত ৭টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই সংলাপে অংশ নেয় এনসিপি। দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
এনসিপি নেতা জহিরুল ইসলাম সংলাপে বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধির ৭ ধারার 'চ' উপধারাই নির্বাচন কমিশনের 'প্রথম পরীক্ষা'। এই উপধারায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী কেবল তাঁর বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি ব্যানার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ও ফেস্টুন ছাপাতে পারবেন; কোনো পোস্টার ছাপানো যাবে না।
জহিরুল ইসলামের বক্তব্য, "বিএনপির বর্তমান প্রধান হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। সে ক্ষেত্রে তারেক রহমানের ছবি যদি বিএনপির কোনো প্রার্থী ব্যবহার করেন, তাহলে কমিশনকে তার ওপর এই বিধিমালা প্রয়োগ করতে হবে। তখনই এই কমিশনের সক্ষমতাটা দেখা যাবে।"
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া দল এনসিপি সংলাপে অভিযোগ করেছে, এই আচরণবিধিমালা বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি ও উৎসবের আমেজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রচারণার উপকরণের সীমাবদ্ধতা: জহিরুল ইসলাম বলেন, বিধিমালার মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী ঐতিহ্যকে অস্বীকার করার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন—প্রচারণায় কেবল কাপড় এবং চটের তৈরি ব্যানার করার কথা বলা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "দেশে চটের ওপর প্রিন্ট দেওয়ার কয়টি প্রতিষ্ঠান আছে? প্রত্যন্ত এলাকায় এই সুযোগ আরও কম।"
শব্দ পরিমাপের প্রশ্ন: আচরণবিধিতে সাউন্ডবক্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ৬০ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে। এনসিপি নেতা প্রশ্ন করেন, "এই শব্দ পরিমাপ করবে কারা? কয়জনের কাছে এই যন্ত্র রয়েছে? এ বিষয়ে অভিযোগটা কার কাছে জানাতে হবে, সেই বিষয়ও স্পষ্ট নয়।"
জহিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সংক্ষুব্ধ কেউ তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ দিতে পারবেন বলে বিধিমালায় উল্লেখ থাকলেও, আইনের সংজ্ঞায় তদন্ত কমিটির কোনো সংজ্ঞায়ন করা হয়নি। তিনি প্রক্রিয়াটিকে জটিল এবং সময়ক্ষেপণের উদ্দেশ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি আরও বলেন, সবাই নির্বাচন কমিশনকে একটি জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের কোনো কর্মকর্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, তাঁর বিরুদ্ধে করণীয় কী হবে, সেই বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। তাঁর মতে, এই আচরণবিধির মাধ্যমে কাঠামোগতভাবে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
আচরণবিধির দুটি ধারাকে সাধুবাদ জানিয়ে সেগুলোকে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান জহিরুল ইসলাম:
ধারা ২৪: প্রতীক বরাদ্দের পর রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার একই মঞ্চে সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহার পাঠ এবং আচরণবিধি প্রতিপালনের ঘোষণা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
ধারা ২৫: নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দলের প্রতিনিধি টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃক আয়োজিত নির্বাচনী সংলাপে অংশ নিতে পারবেন, তবে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে সহিংসতার একটি বড় সম্পর্ক দেখিয়ে এনসিপি নেতা বলেন, কোনো দলের অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় কেউ নিহত বা আহত হলে ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে—এমন বিধান যুক্ত করা উচিত।
অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট হবে বলে জানিয়েছে। সংলাপে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানতে চান, গণভোটের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে?
তিনি নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "নির্বাচন কমিশন যদি তার স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রাখতে পারে এবং তার প্রতিশ্রুতি যদি সংবিধানের কাছে হয়, কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে না হয়, তাহলে এনসিপি নির্বাচন কমিশনকে শতভাগ সহযোগিতা করবে।"
জোটের প্রার্থী নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবে—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এমন সংশোধনীকে সাধুবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকার আহ্বানও জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
