জাতীয় নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিতব্য গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল। দলগুলোর পক্ষ থেকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

রোববার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এই ঘোষণা দেন। দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আট দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ দেওয়ার কারণ

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আট দল শুরু থেকেই সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সংস্কারের অনেক বিষয়ে একটি দল বিরোধিতা করায় জাতিকে এখন সংস্কারের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।

তিনি সরকারকে অনুরোধ জানান, আগে কী ছিল এবং নতুন করে কী কী সংস্কার হচ্ছে, সে তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা, প্রচারপত্র বিলি করা এবং জাতীয় প্রচারমাধ্যমে প্রচার করে জনগণকে যেন স্পষ্টভাবে জানানো হয়।

অনলাইনে একটি দলের কর্মী বাহিনীর গণভোটে ‘না’-এর পক্ষে প্রচার চালানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এর মাধ্যমে কারা সংস্কারের বিপক্ষে এবং এর বিরোধিতা করছে, জাতি তাদের চিনতে পারছে। তিনি বিশ্বাস করেন, গোটা জাতি সংস্কারের পক্ষে, আর যারা এর বিপক্ষে যাবে, জাতি তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।

সরকারপ্রধানকে ভুল তথ্যদানকারী তিনজন উপদেষ্টা কারা, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, এ বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ আট দলের কাছে সংরক্ষিত আছে। প্রয়োজন হলে সময়মতো সেগুলো সামনে আনা হবে। তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে তাঁর নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানান।

আন্দোলন ও নির্বাচন

আট দলের পরবর্তী কর্মসূচি প্রসঙ্গে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। যেহেতু সব দাবি পূরণ হয়নি, তাই আন্দোলন চলমান থাকবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই আন্দোলন জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে না; বরং এই আন্দোলনের ফলেই সংস্কার প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গণভোটে যাচ্ছে, যা আন্দোলনেরই ফসল। এই আন্দোলন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ভূমিকা রাখবে।

গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামায়াতের উদ্দেশে ‘জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছেন কেন? ভালো হয়ে যান’—এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “উনি যা বলেছেন, আমাদের ৮ দলের একই কথা ওনার জন্য প্রযোজ্য। এটা ওনাকে অনুরোধ করছি।”

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার দিন আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) আট দল কোনো কর্মসূচি দেবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আট দল ফ্যাসিবাদবিরোধী আগের কর্মসূচিগুলোর সময়ও মাঠে ছিল এবং আগামীকালও তারা মাঠে থাকবে। তিনি কোনো নাশকতা করতে দেওয়া হবে না বলেও জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহারসহ আট দলের শীর্ষ নেতারা।