× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পুতিন কি ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন?

ন্যাশনাল ট্রিবিউন রিপোর্ট

২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:৪২ পিএম । আপডেটঃ ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:৪২ পিএম

রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

গত ১৭ মার্চ রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভ্লাদিমির পুতিন পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন এবং আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার কথা। এই নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ৭৮ শতাংশ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন এবং পুতিনের পক্ষে ভোট পড়েছে ৮৮ শতাংশ। এটি রাশিয়ার ইতিহাসে সর্বকালের রেকর্ড।

বর্তমানে রাশিয়াতে পুতিনের জনপ্রিয়তা যে আকাশচুম্বী তা পশ্চিমারাও অস্বীকার করতে পারবেন না। এই বিপুল জনসমর্থন এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে পুতিন এখন কী করবেন এবং সম্ভাব্য কী কী করতে যাচ্ছেন?

রাশিয়ার অভ্যন্তরে

যেভাবে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে এবং ভবিষ্যতে  সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে, তাতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাত সামনের দিনগুলোতে আরো গুরুত্ব পাবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ২০২৪ সালের বাজেটের প্রায় ৩৯ শতাংশ ব্যয় করা হচ্ছে প্রতিরক্ষা খাতে। এর কারণে দেশের জিডিপি শতকরা ৩.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মানে হচ্ছে সেই ১৯৭০ দশকের সামরিক অর্থনীতিতে ফিরে যাচ্ছে রাশিয়া।

পুতিন বহু আগে থেকেই রুশ সেনাবাহিনীকে একটি ‘সুপার আর্মি’তে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। এই কাজটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে খুব সহজ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে খাদ্য এবং জ্বালানির মূল্য ভর্তুকি দিয়ে হলেও সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করবেন যাতে জনগণ কিছুটা হলেও স্বস্তিতে থাকতে পারে।

পুতিন প্রায়শই ক্রেমলিনে শিশুদের নিমন্ত্রণ করেন এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মজা করে থাকেন।

রাশিয়াতে জন্মহার ক্রমাগত কমতির দিকে এবং এটি প্রায় সংকটজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে। জনসংখ্যা বাড়াতে ২০০৮ সালে পুতিনের নেওয়া উদ্যোগ আর কাজ করছে না। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ‘সুখি সমৃদ্ধ পরিবার’ গঠনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনার বিশাল প্রকল্প সামনে নিয়ে আসার ঘোষণা এসেছে।

দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা  কমে যেতে শুরু করেছে, তাই পুতিন অভিবাসনে নতুন ধারা সংযোজন করবেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এতে বিদেশি দক্ষ শ্রমিকরা সহজে কাজ করার সুযোগ পাবে। গত কয়েক বছর ধরে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে। যদিও  বিদেশি শ্রমিকরা এখানে এসে কাজ করুক, সেটি বহু রুশের পছন্দ নয়। যেহেতু পুতিন ৬ বছরের জন্য রায় পেয়ে গেছেন তাই অর্থনীতিকে চাঙা করতে বিদেশি শ্রমিকদের বিভিন্ন খাতে নিয়োগ দিতে আর দেরি করতে চাইবেন না।

অন্য একটি বিষয় হচ্ছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশ। পুতিনকে প্রায়ই সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় এই জন্য যে, তিনি নাকি বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সংগঠিত হতে দিতে চান না। যদিও তিনি বহুবার বলেছেন যে, ক্ষমতাসীনদের ‘কাজ হচ্ছে’ বিরোধী দলকে দমন করা আর বিরোধী দলগুলোর ‘কাজ হচ্ছে’ শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে হলেও সামনে এগিয়ে যাওয়া।

তিনি মজা করে প্রশ্ন করেন, ‘তবে কি বিরোধী দলও আমার গঠন করে দিতে হবে?’

নিন্দুকেরা বলাবলি করে যে, প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলই ক্রেমলিনের হাতে গড়া।এবার হয়তো নতুন আঙ্গিকে কিছু নতুন দল গড়ার দিকে পুতিন মনোযোগ দেবেন। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, নিজের দল ইউনাইটেড রাশিয়াকে এড়িয়ে পুতিন এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন।  ইউনাইটেড রাশিয়ার কোনো নেতাকেই তার আশেপাশে খুব একটা দেখা যায়নি।

তাই অনুমান করা যাচ্ছে যে দলগুলোর আবেদন অনেকাংশে ফুরিয়ে এসেছে এবং রাশিয়াতে নতুন রাজনৈতিক দল বা কয়েকটি দলের আত্মপ্রকাশ দেখতে পাওয়া যাবে সামনের দিনগুলোতে। সেসব নতুন দলগুলো থেকেই আগামীতে বিভিন্ন অঞ্চলে বা শহরে গভর্নর অথবা মেয়ররা নির্বাচিত হবেন এবং নতুন ধারার রাজনীতির সূচনা করবে, যা অবশ্যই  ক্রেমলিনের অনুমিত হতে হবে।

উত্তরসূরি তৈরি

সামনের দিনগুলোতে রাশিয়াতে অত্যন্ত নাটকীয় সময় অপেক্ষা করছে। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ, পশ্চিমাদের এই যুদ্ধে সরাসরি জড়ানোর হুঙ্কার, রাশিয়ার অখণ্ডতা এবং নিরাপত্তাকে টিকিয়ে রাখা এবং অর্থনীতিকে মজবুত রাখার বিশাল চ্যালেঞ্জ। এই সব কিছুকে মোকাবেলা করতে বিজ্ঞ, পরিশ্রমী, রুশদের আস্থাভাজন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পুতিনের কর্মসূচিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সে রকম একজনকে উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি করা।

পুতিন কিছুদিনের মধ্যে নতুন সরকার গঠন করবেন। সেখানে এই উত্তরসূরিকে হয়তো দেখতে পাওয়া যাবে না, তবে দুয়েক বছরের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একটি মুখ দেখা যেতে পারে। পরে পুতিন স্বেচ্ছায় হয়তো বা প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে গিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘোষণা করে ওই প্রধানমন্ত্রীকেই রাষ্ট্র প্রধান বানাবেন। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলে অনেকটা সরল অঙ্কের মতই সহজ মনে হবে। কোনো অঘটন না ঘটলে এটাই রাশিয়ার ক্ষমতার পালাবদলের রাজনীতিতে আগামীতে ঘটতে যাচ্ছে।

বহির্বিশ্বের রাজনীতি

পুতিনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রাশিয়ার ভাবমূর্তি যে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তা কিন্তু পশ্চিমাদের বিভিন্ন সময়ের তীব্র আক্রোশযুক্ত মন্তব্যগুলোই প্রমাণ করে দেয়। উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশ এবং আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পুতিনের গ্রহণযোগ্যতার অবিশ্বাস্য উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের গাত্রদাহের কারণ হয়েছে।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে পুতিনের সুসম্পর্ক সুবিদিত।

পশ্চিমারা আরব বিশ্বে এক রকম অসহায় এবং প্রায় কোণঠাসা অবস্থায় পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলেভানের আরব-ইসরায়েলের সম্পর্ক নিয়ে দম্ভোক্তির কয়েকদিন পরেই ইসরায়েলে আক্রমণ করে হামাস। এতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যে সংকট সৃষ্টি হলো তাতে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবে অসহায় হয়ে হাস্যকর শক্তির মহড়া দিতে বাধ্য হচ্ছে, যা কিনা তাদেরকে আরবদের থেকে আরো দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

সামনের কয়েক বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নতুন কিছু জোট বা বলয় গঠিত হতে দেখা যাবে যেগুলো আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি বৈশ্বিক রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে শুরু করবে। এসব প্রায় সবগুলো জোটেই রাশিয়ার শক্তিশালী ভূমিকা পরিলক্ষিত হতে পারে। কেননা রাশিয়া তার নিজস্ব উৎপাদিত খাদ্য, রাসায়নিক সার, অস্ত্র এবং জ্বালানিকে ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোকে কব্জায় আনতে পারবে এবং নিজেদের অবস্থানকে সেসব জায়গায় মজবুত করতে সমর্থ হবে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.