দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই ইডির হাতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেপ্তার তাই রাজনৈতিকভাবে কেজরিওয়াল ও তার দলের জন্য কি ইঙ্গিত বহন করছে, সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
ভারতের রাজনীতিতে নতুনধারার পথ দেখানো আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট (ইডি)।
ইডি হচ্ছে ভারতের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা এজেন্সি, যা অর্থনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থা। এটি ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের অধীনে। ইডি বৈদেশিক মুদ্রা পাচার, দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অপরাধ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত ও বিচারের কাজ করে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জমানায় এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের দমনের রাষ্ট্রিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে বিস্তর অভিযোগ তুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ। একই ধরণের অপরাধের অভিযোগ থাকা স্বত্বেও বিজেপির দলীয় লোকজন এবং বিজেপির পছন্দ লোকজনের সঙ্গে ইডির আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে অভিযোগ আছে। নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতা যত নিরঙ্কুশ হয়েছে, ইডি ততই ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান হয়ে বিজেপির স্বপক্ষে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগও শক্তিমান হয়েছে।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই ইডির হাতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেপ্তার তাই রাজনৈতিকভাবে কেজরিওয়াল ও তার দলের জন্য কি ইঙ্গিত বহন করছে, সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
অভিযোগ কী?
অভিযোগ হচ্ছে, দিল্লিতে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার নীতি বদল করেছেন কেজরিওয়াল ও তার সরকার। এই কাজে তার দলের কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতা মদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন।
এই অভিযোগেরই তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। এই মামলাতেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ও দিল্লির প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীষ সিসোদিয়া এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলে আছেন। দলের সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং ওই একই মামলায় গত বছর অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
যদিও এই নীতিবদল প্রশ্নে কেজরিওয়ালের জবাব হচ্ছে, বেশ কয়েকটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে এই নীতি তৈরি করা হয়েছিল। আইনসচিব, অর্থসচিব এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নরও সই করেছিলেন তাতে। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে শুধু তাকে ও তার দলের নেতাদের। কেজরিওয়াল একে তার প্রতি ও তার দলের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা হিসাবেই চিহ্নিত করে এসেছেন।
গ্রেপ্তার কেন?
দিল্লির আবগারি নীতি সংক্রান্ত ওই মামলায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জেরা করার জন্য নয়বার সমন পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত সংস্থা ইডি। এই সমন বারবার অগ্রাহ্য করেছেন কেজরিওয়াল। ইডির হাতে গ্রেপ্তারি এড়াতে উচ্চ আদালতের কাছে আগাম রক্ষাকবচও চেয়েছিলেন কেজরিওয়াল। দিল্লি হাইকোর্টে তার সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি। আদালতে রক্ষাকবচ না পাওয়ার সিদ্ধান্ত আসার পরপরই গ্রেপ্তার হন তিনি।
বিজেপির টার্গেট
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন বা সংসদ নির্বাচনের তারিখ ইতোমধ্যে ঘোষণা হয়েছে। সাত দফায় এই নির্বাচন শুরু হবে আগামী ১৯ এপ্রিল এবং শেষ হবে ১ জুন। এই লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩ আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে আগামী ৪ জুন।
দিল্লি ও পাঞ্জাবের বিধান সভায় আম আদমি পার্টির সরকার রয়েছে। এর বাইরে আম আদমি পার্টি খুব একটা বিস্তার লাভ না করলেও দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ে ভারতে একটা নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে কেজরিওয়ালের দল ও তার সরকার। জনহিতকর বেশ কিছু উদ্যোগ তাদের দ্বিতীয়বারের মতো দিল্লির বিধানসভায় ক্ষমতায় এনেছে।
যদিও দিল্লির লোকসভা বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজেপির ওপরই আস্থা রেখেছে ভোটাররা। এবারের লোকসভা নির্বাচনে সর্বভারতীয় যে বিরোধী দল বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করছে সেই 'ইন্ডিয়া' জোটের অন্যতম শরীক দল আম আদমি পার্টি। ফলে, বিজেপির দিল্লি জয়ে আম আদমি পার্টি একটা বাধা। সেটাকেই উপড়ে ফেলতে চায় বিজেপি এবং সেটা যেকোনো মূল্যে।
কেজরিওয়ালের ভবিষ্যত
অরবিন্দ কেজরিওয়াল ভারতের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন। এর রাজনৈতিক সুবিধা পেতে পারেন কেজরিওয়াল ও তার দল। ইতোমধ্যে তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত দলীয় কর্মী ও অনুগামীদের উদ্দেশে বার্তা পাঠিয়ে তিনি আবেদন করেছেন, 'আমার গ্রেপ্তারের জন্য আপনারা বিজেপির কর্মীদের প্রতি ঘৃণা বর্ষণ করবেন না।' সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এই গ্রেপ্তারকেও তিনি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে তার ইমেজকে বাড়াতে চাইছেন।
কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের পর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব কে পালন করবেন? কিংবা দলের হালই বা কে ধরবেন? সে বিষয়ে কেজরিওয়াল সুগভীর রাজনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছেন। তার স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল এখন তার পক্ষে জনসমক্ষে কেজরিওয়ালের বার্তা পড়ে শোনাচ্ছেন।
সম্প্রতি স্ত্রী সুনীতার কাছে পাঠানো এক বার্তায় অনুগামীদের উদ্দেশে কেজরিওয়াল বলেছেন, 'জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত দেশের সেবা করার জন্য উৎসর্গ করেছি। ভেতরে থাকি কিংবা বাইরে, মানুষের জন্য কাজ করে যাব। আমার জীবনে এমন কখনো ঘটেনি যে প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। এবারও হবো না।'
সেই সঙ্গে তার ঘোষণা, 'যেসব অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শক্তি দেশকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমার লড়াই চলবে।'
বোঝাই যাচ্ছে কেজরিওয়াল দ্রুত দমে যাওয়ার পাত্র নন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh