বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ
বাংলাদেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন যেন এক অধরা স্বপ্ন। অথচ ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি, শিক্ষার্থীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং জাতীয় রাজনীতিতে যোগ্য নেতৃত্ব সরবরাহের স্বার্থে এই প্ল্যাটফর্মের নিয়মিত উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি।
শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার এটিই একমাত্র বৈধ প্ল্যাটফর্ম, যা তাদের পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে নেতৃত্ব বিকশিত হয়, যা দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১-এর স্বাধীনতা আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত দেশের সংকটময় মুহূর্তে এ দেশের ছাত্র সমাজ সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে ছাত্র সংসদের ভূমিকা অপরিসীম।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস সুখকর নয়। কদাচিৎ নির্বাচন হলেও ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, যা আশার সঞ্চার করে। যেমন:
তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ, নয়তো প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি।
১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত দেশের চারটি বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন নির্বাচন বন্ধ ছিল। ১৯৯০ সালের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হয়েছে মাত্র একবার, ২০১৯ সালে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও তিন দশকের বেশি সময় ধরে নির্বাচন বন্ধ। অথচ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির নির্বাচন প্রায় নিয়মিতই হচ্ছে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত না হওয়ার ফলে লেজুড়বৃত্তিক ও সন্ত্রাস-নির্ভর ছাত্ররাজনীতির মীমাংসা হচ্ছে না। ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন এবং এটিকে ছাত্রবান্ধব করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই।
তবে ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসুর নির্বাচনের তফসিল পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় স্পষ্ট— নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘসূত্রিতা। নির্বাচনযজ্ঞ পার করতে গিয়ে সেশনজটসহ একাডেমিক কাজে একধরনের ছেদ পড়ে, যা শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে। এই দীর্ঘসূত্রিতা কমানো এবং একাডেমিক ক্যালেন্ডারে নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলকে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে।
এই জটিলতা নিরসনে এবং একাডেমিক কাজের ক্ষতি না করে নিয়মিত নির্বাচন নিশ্চিত করতে একটি সহজ এবং নতুন 'গণতান্ত্রিক মডেল' নিয়ে ভাবা যেতে পারে, যা 'বেসিক ডেমোক্রেসি' পদ্ধতির অনুরূপ। এই পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিটি নিম্নরূপ হতে পারে:
১. প্রথম ধাপ: প্রতিটি বর্ষ বা শ্রেণিভিত্তিক প্রতিনিধি নির্বাচন হবে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে। এ ধরনের শ্রেণি প্রতিনিধি নির্বাচন বিভাগীয় নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখেই করা সম্ভব।
২. দ্বিতীয় ধাপ: নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধিরা ভোটের মাধ্যমে বিভাগীয় প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। হলগুলোতেও হলভিত্তিক বর্ষ প্রতিনিধি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করা যেতে পারে।
৩. তৃতীয় ধাপ: এই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা (শ্রেণি ও বিভাগীয়) তাদের ভোটে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
এই পদ্ধতিতে শ্রেণি ও বিভাগের প্রতিনিধি নির্বাচন নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে হওয়ায় প্রচার-প্রচারণা কম সময়ে করা সম্ভব হবে। ফলে নির্বাচনী ব্যয় অনেকাংশে কমে আসবে এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, সর্বোপরি প্রশাসনের বিরাট সময় বাঁচবে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে যুক্ত করা জরুরি। এক্ষেত্রে প্রতি শিক্ষাবর্ষ শুরুর ২-৩ মাসের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দিনে নিয়মিত নির্বাচন সম্পন্ন করা সহজ হবে, যা অনেক জটিলতা কমিয়ে দেবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের বিধিমালা ও গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মিত ও পরীক্ষায় একাধিকবার অকৃতকার্য শিক্ষার্থী যেন কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে।
আমরা সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে প্রত্যাশা করি, এমন গঠনমূলক ছাত্র রাজনীতির ধারা সূচিত হোক, যেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হবে এবং ফিরে আসবে ছাত্র রাজনীতির হারানো সোনালী অতীত।
শিক্ষক: বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
বিষয় : বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
