চোখে আঘাত পাওয়া নাফিস আহসান। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর তোলা | ছবি—সংগৃহীত
১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার, সকাল সাড়ে ১০টা! রাজধানীর রামপুরার বাসা থেকে মেরুল বাড্ডা হয়ে কর্মস্থল মহাখালীতে যাচ্ছিলেন নাফিস আহসান (৩০)। সাধারণত রিকশায় যান, সেদিন রিকশা না পেয়ে যাচ্ছিলেন হেঁটে। মেরুল–বাড্ডা এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত চলছিল সেদিন।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাফিসের শরীরে ও চোখে ছররা গুলি লাগে। শরীর থেকে ছররা গুলি বের করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাঁ চোখে এখনো কিছু দেখেন না তিনি। মুঠোফোনে কথা হয় নাফিসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার সম্ভবত আর দৃষ্টি ফিরবে না।’
নাফিস রামপুরার পশ্চিম হাজিপাড়া নতুন রাস্তা এলাকায় থাকেন। চাকরি করেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের মহাখালী শাখায়। স্বজনেরা জানান, নাফিসের বুক, কপাল ও হাতে ২২টি ছররা গুলি লেগেছিল। আর চোখে লেগেছিল আরও দুটি। এতে তাঁর বাঁ চোখ মারাত্মক জখম হয়।
আহত হওয়ার পর নাফিসকে প্রথম নেয়া হয় রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার লায়ন চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন নাফিসেরই বড় মামা শহীদুল হক। তিনিসহ বিশেষজ্ঞ কয়েকজন চিকিৎসক নাফিসের চোখের অস্ত্রোপচার করেন।
গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে ওকে হাসপাতালে আনা হয়। খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দুজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করি। সিটিস্ক্যান করানো হয়। ওর বাম চোখের ভেতরে দুটি গুলির প্লেট ছিল। একদম ডিপ ইনসাইড দ্য আইবলে দুটি গুলি।’
শহীদুল হক আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাম চোখে সে (নাফিস) অলমোস্ট ব্লাইন্ড। চোখ খুললে অন্ধকারে মানুষ হেঁটে গেলে যেমন লাগে, এ রকম দেখে। অর্থাৎ ওই চোখে তার দৃষ্টি আর নাই।’
লায়ন চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ১৮ থেকে ২০ জুলাই তিন দিনে তাঁদের হাসপাতালে দেড় শতাধিক আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে আসেন। চোখে জখম বা আঘাতের বাইরেও অনেকে শরীরের অন্যান্য অংশের আঘাত নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চোখে হালকা ও গুরুতর জখম নিয়ে প্রায় ৫০ জন ব্যক্তি ওই তিন দিনে হাসপাতালে এসেছিলেন। মোট ২০ জনের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এর মধ্যে চোখের বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে ১১ জনের। আর চোখ হারানোর কিংবা চোখে দৃষ্টি আর না ফিরে পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে চারজনের। নাফিস বাদে অন্য তিনজন হলেন ফয়সাল আহমেদ, রফিকুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান।
দৃষ্টি হারানোর শঙ্কায় আছেন ফয়সাল আহমেদ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে তাঁর ভর্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন মিরপুরের নির্ঝর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে।
ফয়সালের চোখে গুলি লাগে ১৮ জুলাই বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে। তখন তিনি মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে মিরপুর-২ নম্বরের মাঝামাঝি এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছিলেন।
মুঠোফোনে ফয়সাল বলেন, ‘মিরপুর-১০–এ (গোলচত্বর) অনেক ঝামেলা হচ্ছিল। পদচারী–সেতুতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ মিরপুর-২ নম্বরের দিক থেকে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট মারছিল। আমরাও সেদিকে (মিরপুর-২) এগোচ্ছিলাম। বুঝতেই পারিনি কখন আমার চোখে গুলি ঢুকে গেছে।’
তাঁর ডান চোখে গুলি লাগে জানিয়ে ফয়সাল বলেন, ‘এখন যা দেখি, সব ঘোলা। এটা না দেখার মতোই। ডাক্তাররা বলতেছে, ওই চোখে আমার দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’
বাংলাদেশ লায়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম রেজাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, আহত হয়ে হাসপাতালে আসা প্রায় ২০ জনের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তবে দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টায় চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিষয় : কোটা সংস্কার আন্দোলন কোটা বিতর্ক গুলি
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh