× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে জেতা ৫৯ এমপি এবার ধরাশায়ী

ন্যাশনাল ট্রিবিউন ডেস্ক

১০ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:২৪ পিএম । আপডেটঃ ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:২৫ পিএম

একাদশ সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ আসনে ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়ে এমপি হওয়া আওয়ামী লীগের আ কা ম সরওয়ার জাহান। গেলবার ঢাকা-১৯ আসনে এমপি হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রায় ৮৫ শতাংশ ভোট পেয়ে।গাইবান্ধা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ৯৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এমপি হয়েছিলেন। এবারের সংসদ নির্বাচনে তাদের মতো ৫৯ এমপি হেরেছেন। যারা গতবার বিএনপি জোটের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে এমপি হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের মনোনীত ২৬ এমপি এবার পরাজিত হয়েছেন। তাদের সবাই নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিপক্ষে হেরেছেন। তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি; তৃতীয় হয়েছেন। জামানত হারিয়েছেন একজন। জাতীয় পার্টির (জাপা) ১০ এমপি হেরেছেন। পাঁচজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টি ২ এবং জাসদ, জেপি, তরীকত ফেডারেশন ও বিকল্পধারার একজন করে মোট ছয় এমপি এবারের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। আরেক স্বতন্ত্র এমপি এবার জিততে পারেননি, জামানতও হারিয়েছেন। 

আওয়ামী লীগের ১৭ ও জাপার দুই এমপি মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের তিনজন জয়ী হয়েছেন। বাকি ১৬ এমপি হেরেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পরাজিত এমপিদের চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি; জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

অবশ্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত, ওয়ার্কার্স পার্টি ও তরীকতের তিন এমপি নির্বাচনের আগের বিভিন্ন সময়ে ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। যদিও ব্যালটে তাদের নাম ছিল। এ হিসাবে পরাজিত এমপিদের তালিকায় তারাও রয়েছেন। 

একাদশ সংসদের দলীয় ৭১ এমপিকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। সাত এমপি নৌকা পেয়েও হারান শরিকদের সঙ্গে সমঝোতায়। এই ৭৮ এমপির ৬১ জন প্রার্থী হননি। জাতীয় পার্টির ৩ ও জাসদের ১ এমপি নির্বাচন করেননি। সব মিলিয়ে একাদশ সংসদের ৬৫ এমপি নির্বাচন করেননি। পরাজিত ৫৯ জনসহ একাদশের ১২৪ এমপি থাকছেন না নতুন সংসদে। তাদের আসনে জয়ী ৮৫ জন প্রথমবারের মতো এমপি হয়েছেন। বাকি ৩৯ জন অতীতে এমপি ছিলেন।

দাপুটে জেতা নৌকার যে এমপিরা এবার হারলেন

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও জিততে পারেননি এমন ২৬ এমপি হলেন– দিনাজপুর-১ মনোরঞ্জন শীল গোপাল, নাটোর-১ শহিদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া-১ আ ক ম সরওয়ার জাহান, কুষ্টিয়া-৪ সেলিম আলতাফ জর্জ, ঝিনাইদহ-২ তাহজীব আলম সিদ্দিকী, যশোর-৫ স্বপন ভট্টাচার্য্য, যশোর-৬ শাহীন চাকলাদার, বরগুনা-১ ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু, শেরপুর-১ আতিউর রহমান আতিক, ময়মনসিংহ-১ জুয়েল আরেং, ময়মনসিংহ-৬ মোসলেম উদ্দিন, ময়মনসিংহ-৭ রুহুল আমীন মাদানী, ময়মনসিংহ-১১ কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু, নেত্রকোনা-৩ অসীম কুমার উকিল, মানিকগঞ্জ-২ মমতাজ বেগম, মুন্সীগঞ্জ-৩ মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা-১৯ এনামুর রহমান, গাজীপুর-৫ মেহের আফরোজ চুমকি, মাদারীপুর-৩ আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, হবিগঞ্জ-৪ মাহবুব আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ মো. ফরহাদ হোসেন, কুমিল্লা-২ সেলিমা আহমাদ, কুমিল্লা-৩ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, কুমিল্লা-৪ রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, কুমিল্লা-৫ আবুল হাসেম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।

গত নির্বাচনে সেলিমা আহমাদ নৌকা প্রতীকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এবার তিনি ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। ৯৪ শতাংশ ভোটে ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ৯৫ শতাংশ ভোটে গতবার এমপি হয়েছিলেন। এবার তাদের প্রাপ্ত ভোট ৪০ শতাংশের কিছু বেশি।

বিপুল ভোটে জেতা জাপা এমপিদের এবার জামানত জব্দ

লাঙ্গল পেয়ে পরাজিত জাপার ১০ এমপি হলেন– নীলফামারী-৩ রানা মো. সোহেল, নীলফামারী-৪ আহসান আদেলুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বগুড়া-৩ নুরুল ইসলাম তালুকদার, বরিশাল-৬ নাসরিন হাওলাদার রত্না, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা ও সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান।

নীলফামারী-৩, নীলফামারী-৪, কুড়িগ্রাম-২, গাইবান্ধা-১, বগুড়া-৩ ও ময়মনসিংহ-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন না। তবু আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে টিকতে পারেননি জাপা প্রার্থীরা। নীলফামারী-৩, নীলফামারী-৪, বগুড়া-৩ আসনে জামানত হারিয়েছেন লাঙ্গলের এমপিরা। ছাড়ের বাইরে বরিশাল-৬ আসনে জাপার এমপি জামানত হারিয়েছেন। গত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জয়ী হয়েছিলেন লিয়াকত হোসেন খোকা। জামানত বাঁচলেও এবার তিনি ২৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

জাপা নেতারা জানিয়েছেন, দলের সাংগঠনিক শক্তি নেই, এমপিদের বিরুদ্ধে অনিয়মের নানা অভিযোগ ছিল। অনেকেই গতবার অস্বাভাবিক ব্যবধানে জয়ের পর আর এলাকায় যাননি। আবার আগের মতো সহজে এমপি হওয়ার আশায় ছিলেন। দলের নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে ছিল না। এসব কারণেই ভরাডুবি হয়েছে। জাপার জি এম কাদের অবশ্য কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিততে পারেননি যে এমপিরা

আওয়ামী লীগে মনোনয়নবঞ্চিত এমপিদের মধ্যে গাইবান্ধা-৪ মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, নওগাঁ-৩ ছলিম উদ্দিন তরফদার, নওগাঁ-৪ ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক, রাজশাহী-৪ এনামুল হক, ঝিনাইদহ-৩ শফিকুল আজম খান চঞ্চল, যশোর-৪ রঞ্জিত কুমার রায়, সাতক্ষীরা-২ মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, বরিশাল-৪ পঙ্কজ নাথ, টাঙ্গাইল-৫ ছানোয়ার হোসেন, জামালপুর-৪ মুরাদ হাসান, ময়মনসিংহ-৯ আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, গাজীপুর-৩ ইকবাল হোসেন সবুজ, সুনামগঞ্জ-১ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ জয়া সেনগুপ্তা, হবিগঞ্জ-২ আবদুল মজিদ খান, চট্টগ্রাম-১২ সামশুল হক চৌধুরী ও কক্সবাজার-১ আসনে জাফর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। জয়ী হয়েছেন শুধু পঙ্কজ নাথ, ছানোয়ার হোসেন ও জয়া সেনগুপ্তা।

জামানত হারিয়েছেন চারজন। গত নির্বাচনে গাইবান্ধা-৪ আসনে মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ৯৬ শতাংশ ভোটে জয়ী হন। এই এমপি এবার ভোটের দিন সংবাদ সম্মেলনে কারচুপির অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেন। এবার তিনি ২ শতাংশ ভোটও পাননি। নওগাঁ-৪ আসনে ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক গত নির্বাচনে ৭২ শতাংশ ভোট পেয়ে ষষ্ঠবারের মতো এমপি হয়েছিলেন। এবার পেয়েছেন পৌনে ৭ শতাংশ ভোট। দু’জনেরই জামানত জব্দ হয়েছে।

জাপার দুই এমপি রংপুর-১ মসিউর রহমান রাঙ্গা ও পিরোজপুর-৩ রুস্তম আলী ফরাজী মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। গত নির্বাচনে ৯১ শতাংশ ভোট পাওয়া রাঙ্গা এবার পেয়েছেন ২১ শতাংশ। ফরাজী গতবার ৯৩ শতাংশ ভোটে এমপি হলেও এবার পেয়েছেন ৪৩ শতাংশ ভোট।

১৪ দল এবং অন্য যে এমপিরা পরাজিত

কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদের হাসানুল হক ইনু, রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা ও পিরোজপুর-২ আসনে জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জিততে পারেননি। পরাজয়ের শঙ্কায় দুই এমপি প্রচারে নেমেও বসে পড়েন। তারা হলেন সাতক্ষীরা-১ আসনের মোস্তফা লুৎফুল্লাহ ও চট্টগ্রাম-২ আসনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। লুৎফুল্লাহ গত নির্বাচনে ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিকল্পধারার এমপি মাহী বি. চৌধুরী গত নির্বাচনে ৮৬ শতাংশ ভোটে জয়ী হলেও এবার ৯ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন; হারিয়েছেন জামানত। 
গত নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু বিএনপির সমর্থনে ৭৪ শতাংশ ভোট পেয়ে এমপি হয়েছিলেন। এবার ২ শতাংশের কম ভোট পেয়েছেন।

যে কারণে হারলেন এমপিরা

কুষ্টিয়ার চার এমপির তিনজনই হেরেছেন। আগের নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ আসনে ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো জয়ী ইনু এবারের পরাজয়ের বিষয়ে বলেছেন, প্রশাসন, কালো টাকা ও মাস্তানের আধিপত্যে হেরেছি; হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হালিম বলেন, ইনুর এমপিত্বের ১৫ বছরে জাসদের নেতারা নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। এর ফল পেয়েছেন নির্বাচনে।

কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপি সরওয়ার জাহান বাদশা দৌলতপুর আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। গত নির্বাচনে জয়ের পর এলাকায় না থাকলেও নিজস্ব বলয় তৈরি করেন। এতে দলে বিভক্তি দেখা দেয়। এ কারণে নৌকা তৃতীয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।

ময়মনসিংহ বিভাগের ২৪ এমপির ৯ জন পরাজিত হয়েছেন। নেত্রকোনা-৩ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল গত নির্বাচনে ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৪ ভোট পেয়েছিলেন। এবার ৭৪ হাজার ৫৫০ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হারেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে দূরত্বের কারণে এ ফল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। তবে অসীম কুমার উকিল বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কালো টাকার প্রভাবে নৌকা হেরেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের ছয় এমপি হেরেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাদের কোণঠাসা করা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম-১২ আসনের সামশুল হক চৌধুরী নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। মাত্র ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনবারের এই এমপি। তাঁর বিরুদ্ধে দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম-১৬ আসনের দাপুটে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিতর্কিত ছিলেন। এবার ভোটের দিন পুলিশ কর্মকর্তাকে হুমকি দিয়ে প্রার্থিতা হারান।

যশোরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যাওয়া প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের ছেলে ও ভাগনের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাঁর ভাগনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী ত্রাণের চাল চুরির মামলায় কারাগারেও গিয়েছেন। ভবদহ অঞ্চলের নদী খননে প্রতিমন্ত্রীর ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য শুভর কাজ পাওয়া এবং তাতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। মন্দিরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এমপির বিরুদ্ধে। অনৈতিক সুবিধা আদায়ে তিনি প্রতিটি ইউনিয়নে অযোগ্য ও সুযোগসন্ধানী লোক পুষেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মনিরামপুর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিকাইল হোসেন।

উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেনের ভাষ্য, প্রতিমন্ত্রী দলের কর্তৃত্ব দখলে ত্যাগী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। তাঁর ছেলে ও ভাগনের সিন্ডিকেট নিয়োগ-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব করেছে। দলের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। 

যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের এমপি শাহীন চাকলাদার হেরেছেন ২৯ বছর বয়সী স্থানীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আজিজুল ইসলামের কাছে। যশোর সদরের বাসিন্দা শাহীন চাকলাদারের অনুসারীদের বিতর্কিত কাজে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের। নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সামাদ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশের ভোট পাওয়ায় আজিজুল ইসলাম জিতেছেন। প্রশাসনও নৌকার কর্মীদের ওপর খবরদারি করেছে। ফলে তারা সহজে প্রচার চালাতে পারেননি। জয়ী আজিজুল ইসলাম বলেন, কেশবপুরের মানুষকে বহিরাগত শাহীন চাকলাদার ও তাঁর লোকজন নানাভাবে বঞ্চিত করেছেন। বঞ্চিত মানুষ ভোটে জবাব দিয়েছেন।

রংপুরের ভোটারের অভিযোগ, রাঙ্গা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। গঙ্গাচড়ার অসহায় পরিবারের জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাঁর কর্মীর সঙ্গে কারও মতবিরোধ হলে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হয়। প্রকাশ্য চাঁদাবাজি ছিল। রাঙ্গাকে ‘স্যার’ ডাকতে হয়।

সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি নৌকা না পেয়ে হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর প্রতীক হিসেবে বেছে নেন ঈগল। গত নির্বাচনে ৮৮ শতাংশ ভোট পেলেও এবার লাঙ্গলের প্রার্থীর বিপক্ষে ৬০ হাজার ৯১০ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। মাত্র ২১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। নিয়োগ-বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, টেন্ডারবাজিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে রবি বলছেন, ১০ বছরে এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন করেছি। মানুষ হয়তো তা বুঝতে ভুল করেছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী চায়নি জয়ী হই।

বরিশাল বিভাগের চার এমপি পরাজিত হয়েছেন। বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের পাঁচবারের এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু এবার তৃতীয় হয়েছেন। তিনি পাশের জেলার তুলনায় বরগুনায় উন্নয়ন করতে পারেননি বলে ভোটে প্রচার ছিল। 

সিলেট বিভাগের তিন এমপি জিততে পারেননি। হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর পরাজয় সবচেয়ে আলোচিত। তিনি প্রায় এক লাখ ভোটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচিত ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের কাছে হেরে গেছেন। গত নির্বাচনে ৮৫ শতাংশ ভোট পাওয়া মাহবুব আলী এবার পেয়েছেন মাত্র ২৮ শতাংশ ভোট। স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রতিমন্ত্রীর কাছে যেতে পারতেন না সাধারণ মানুষ। নেতাকর্মীর সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়। নৌকার ঘোর সমর্থক চা শ্রমিকরাও তাই ভোট দিয়েছেন ব্যারিস্টার সুমনের ঈগলে। 

হবিগঞ্জ-২ আসনের তিনবারের এমপি আবদুল মজিদ খান নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তিনি প্রায় ৫০ হাজার ভোটে হেরেছেন। যদিও গত নির্বাচনে ধানের শীষের বিপক্ষে ১ লাখ ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, আবদুল মজিদ এমপি হয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করেন। সেই বলয়ের সদস্যরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। হামলা করা হয়েছে অনেক নেতাকর্মীর বাড়িতে। 

নওগাঁর ছয় এমপির তিনজনই হেরেছেন। নওগাঁ-৩ আসনের এমপি ছলিম উদ্দিন তরফদারের ট্রাক আটকাতে পারেনি নৌকাকে। মহাদেবপুর আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘ছলিম উদ্দিন তরফদার, তাঁর ছেলে সাকলাইন আহমেদ, ভাগনে শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ভরাডুবি হয়েছে।’

আত্রাই ও রানীনগর নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসনে নৌকার এমপি আনোয়ার হোসেন হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। আত্রাই আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী গোলাম মোস্তফা বলেন, আনোয়ার হোসেন মাত্র তিন বছর এমপি। এই সময়ের মধ্যে তাঁর ছেলেমেয়েরা শূন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন। 

গত নির্বাচনে বগুড়া-৩ আসনে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯২ ভোট পেয়ে জয়ী নুরুল ইসলাম তালুকদার এবার মাত্র ১০ হাজার ৫২৩ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়া আরেক এমপি রেজাউল করিম বাবলুও জামানত হারিয়েছেন। তিনি বলছেন, গতবার বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত হয়েছিলাম। এবার গাবতলী বিএনপির এক নেতার আশ্বাসে প্রার্থী হয়েছিলাম। তিনি প্রতারণা করেছেন।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.