× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

এমপি আনার হত্যা

দায় স্বীকার করে জবানবন্দিতে যে বর্ণনা দিলেন শিমুল ভূঁইয়া

ন্যাশনাল ট্রিবিউন রিপোর্ট

০৫ জুন ২০২৪, ১০:৪৮ এএম । আপডেটঃ ০৫ জুন ২০২৪, ১০:৪৯ এএম

ছবি: সংগৃহীত

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পর হাড় ও মাংস আলাদা করে টুকরা টুকরা করা হয়। স্বীকারোক্তিতে এমন কথা বলেছেন আনোয়ারুল আজীম অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে মাহমুদ হাসান শিমুল ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া।

এত দিন বিভিন্ন তদন্ত সূত্রে জানা যায়, এমপি আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পর লাশ টুকরা টুকরা করে গুম করা হয়। এবার চাঞ্চল্যকর এই মামলার আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে তথ্যই দিয়েছেন।

বুধবার (৫ জুন) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শিমুল ভূঁইয়া। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।

এর আগে গত সোমবার এই মামলায় গ্রেপ্তার শিলাস্তি রহমান ও গত মঙ্গলবার শিমুলের ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

স্বীকারোক্তিতে শিমুল আরও বলেছেন, ব্যবসায়িক বিরোধের কারণে এমপিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীন। আর ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন আমান।

বুধবার (৫ জুন) দুপুরের শিমুলকে আদালতে হাজির করেন আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র এএসপি মাহফুজুর রহমান। তিনি এক আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি এমপি আনারকে হত্যায় মূল ভূমিকা পালন করেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চান।

আদালত স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি গ্রহণ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ঢাকার আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শিমুল ভূঁইয়া খুলনা জেলার ফুলতলা থানার দামোদর গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির নাসির উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে।

সূত্র জানায়, শিমুল ভূঁইয়া আদালতকে জানিয়েছেন, তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতা। খুলনা, ঝিনাইদহ, যশোরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এমপি আনারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। আবার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গেও এমপি আনারের ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। তাই শিমুল ও শাহীন দীর্ঘদিন ধরে আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিলেন। গত জানুয়ারি ও মার্চে আনারকে হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

পরবর্তীতে শাহীন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বসে আসামিদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন। আনারকে ভারতের কলকাতায় নিয়ে হত্যা ও লাশ গুম করার ফন্দি আঁটেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসার লোভ দেখিয়ে এমপি আনারকে কলকাতায় যেতে রাজি করান শিমুল ও অন্য আসামিরা। এমপি আনার জানান, কলকাতায় তাঁর বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান আছে, তখন তিনি যাবেন।

কলকাতার অভিজাত নিউটাউন এলাকায় শাহীনের একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাট আছে। গত ২৫ এপ্রিল শাহীন জানান, সেখানে আরও লোক আছে, আপনারাও সেখানে গিয়ে ওঠেন।

শাহীনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩০ এপ্রিল শিমুল ও শিলাস্তি বাংলাদেশ থেকে গিয়ে ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। গত ৬ মে শিমুলের ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়াও কলকাতায় যান। তানভীর কলকাতার নিউটাউন ও সল্ট লেকের মাঝামাঝি ত্রিশিব হোটেলে ওঠেন। ওই হোটেলে থেকে তানভীর বিভিন্ন সময়ে শিমুলের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর পরিকল্পনা ও নির্দেশ মতো কাজ করতে থাকেন। আর ফ্ল্যাটে আগে থেকে অবস্থান করেন জিহাদ ও সিয়াম। পরে সেখানে যোগ দেন মোস্তাফিজ, তাজ, জামালসহ আরও কয়েকজন।

শিমুল জবানবন্দিতে আরও বলেন, গত ১০ মে আখতারুজ্জামান শাহীন সবার সঙ্গে বৈঠক করে দায়িত্ব বণ্টন করে বাংলাদেশে চলে আসেন। এমপিকে আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে সর্বশেষ কলকাতা বিমানবন্দরের পাশে ওটু নামের একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে শাহীন, শিমুল ভূঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, জিহাদ, তানভীর, সিয়াম, শিলাস্তি রহমানসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয়।

শিমুল ভূঁইয়ার পরিকল্পনা মতো সবাই মিলে এমপি আনোয়ারুল আজিমকে প্রলুব্ধ করে কলকাতায় তাঁর বন্ধুর বাড়ি থেকে ডেকে নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনসের আবাসিক ভবনে শাহীনের ভাড়া বাসায় নেওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে হত্যা করা হয়।

শিমুল অন্য আসামিদের সহায়তায় এমপি আনারকে হত্যা করেন। এরপর হাড় ও মাংস আলাদা করেন এবং মাংসের ছোট ছোট টুকরা করে ওই ফ্ল্যাটের টয়লেটের কমোডে ফেলে দিয়ে ফ্লাশ করেন। আর হাড়সহ শরীরে অন্যান্য অংশ ট্রলিব্যাগে করে কলকাতার কৃষ্ণমাটি এলাকার জিরানগাছা বাগজোলা খালে ফেলে দেন।

শিমুল ভূঁইয়া জানান, হত্যা ও হাড়–মাংস আলাদা করার কাজে ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদ সরাসরি জড়িত ছিলেন। আর হাড় ও শরীরের অন্যান্য অংশ দূরে ফেলে দেওয়ার কাজে ছিলেন সিয়ামসহ অজ্ঞাতনামা ২ / ১ জন।

শিমুল, শিলাস্তি ও তানভীরকে গত ২২ মে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর আগে আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার ঘটনায় গত ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের পর গুম করার অভিযোগে মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে তাঁর বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এমপি ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে রওনা হন। ১১ মে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে বন্ধ পান।

গত ১৩ মে আনারের ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেব।’

পরে আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, এমপি আনার ভারতে খুন হয়েছেন বলে বাদী জানতে পেরেছেন। তবে এখনো লাশ পায়নি পরিবার।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে দর্শনা–গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু ১৬ মে থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পারায় নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন তাঁর কলকাতার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস।

গত ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার খবর আসে। এরপর তার মেয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর গুম করার অভিযোগে মামলা করেন।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.