এমভি আবদুল্লাহ। ফাইল ছবি
সোমালি জলদস্যুদের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে নোঙর করার কথা ছিল ২২ এপ্রিল।
কিন্তু গতি বাড়ায় জাহাজটি এক দিন আগেই রোববার সেই বন্দরে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে। এর পরই শুরু হবে জাহাজটিতে থাকা নাবিকদের দেশে ফেরার আনুষ্ঠানিকতা।
তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় জেনারেল স্টুয়ার্ড মোহাম্মদ নূর উদ্দিন ও সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী আর জাহাজে করে দেশে ফিরতে চান না। তারা বিমানে দুবাই থেকে দেশে ফিরতে চান।
মোট ২৩ নাবিকের মধ্যে ওই দু’জন ছাড়া বাকি ২১ জন একসঙ্গে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।
জাহাজে ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন জেনারেল স্টুয়ার্ড নূর উদ্দিন। কিন্তু ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর থেকে এখন আর জাহাজে থাকতে ইচ্ছা করছে না তাঁর। কত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরবেন, তা নিয়েই উদ্বিগ্ন।
স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে ফোনে কথা বলে এমনটিই জানিয়েছেন এক সন্তানের জনক নূর উদ্দিন। ফারদিন নূর নামে তাঁর আড়াই বছর বয়সী এক সন্তান রয়েছে। অভিন্ন অবস্থা সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোজাহেদুল ইসলামেরও। তিনিও মা ফেরদৌস আক্তারকে ফোন করে দুবাই থেকে বিমানে দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।
কেন এত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরতে চাচ্ছেন নূর উদ্দিন– এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, শারীরিকভাবে কোনো অসুস্থতা নেই আমার স্বামীর। তবে মানসিকভাবে সে খুব বিপর্যস্ত। আমাকে বারবার বলছেন, তাঁর কিছু ভালো লাগছে না। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমতো করতে পারছেন না। ফিরে এলে তাঁকে মনোচিকিৎসক দেখাব।
দেশে ফেরার পর নূর উদ্দিন দু-তিন মাস বিশ্রামে থাকবেন বলেও জানান তাঁর স্ত্রী। আবার কবে নূর উদ্দিন জাহাজে উঠবেন, সেই সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সময়ে নেবেন বলে জানিয়েছেন স্ত্রীকে।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সুস্থ থাকলে অনেক কিছু করা যাবে। কিন্তু মানসিকভাবে তিনি যদি সুস্থ না থাকেন, তাহলে তো বিকল্প ভাবতে হবে আমাদের।
সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোজাহেদুল ইসলামের মা ফেরদৌস আক্তার বলেন, ছেলের সঙ্গে এখন প্রতিদিনই কথা হয়। আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছে তারা। আমাদেরও দুশ্চিন্তা কমেছে। তবে টেনশন থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি।
ছেলে বলছে, তার মানসিক অবস্থা ভালো নেই; দ্রুত দেশে ফিরতে চায়। জাহাজে করে দেশে ফিরতে আরও সাত-আট দিন দেরি হবে। তাই দুবাই থেকে বিমানে দেশে ফিরবে বলে জানিয়েছে। তবে কবে কোথায় আসবে, তা এখনও জানে না সে। এটা জাহাজের মালিকপক্ষ ঠিক করবে।
এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ জানিয়েছে, জাহাজটি দুবাইয়ে নোঙর ফেলবে ২১ এপ্রিল। সেখানে পণ্য খালাস কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই নাবিকদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
কেএসআরএমের সিইও মেহেরুল করিম বলেন, দুজন নাবিক দুবাই থেকে বিমানে দেশে ফিরতে চান। বাকি ২১ জন জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন। ওই দুজন কখন, কীভাবে দেশে ফিরবেন, সেটা আমরা জাহাজ নোঙর করার পর ঠিক করব। যিনি যেভাবে আসতে চান, তাঁকে সেভাবেই দেশে আনব।
জলদস্যুদের কবল থেকে জাহাজটি মুক্ত হওয়ার আগেই নাবিকরা কে কোন জায়গা থেকে সাইন অফ (জাহাজের কর্ম হতে অব্যাহতি) করবেন, তার তালিকা চূড়ান্ত করে রাখে মালিকপক্ষ।
সূত্র জানায়, মালিকপক্ষের নির্দেশে এ ব্যাপারে এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেনকে একটি তালিকাও দিয়েছিলেন নাবিকরা। সেই তালিকায় ২৩ নাবিকের মধ্যে ১৮ জন আরব আমিরাতের বন্দর থেকে সাইন অফ করবেন বলে জানিয়েছেন। বাকি পাঁচজন জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে সাইন অফ করবেন বলে জানান।
তবে এখন বেশির ভাগ নাবিক সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছেন। ২১ নাবিকই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে করে ফিরতে চান দেশে।
কেএসআরএমের ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রাহাত জানান, জাহাজটি ২২ এপ্রিল দুবাইয়ে নোঙর ফেলার কথা থাকলেও তা এখন এক দিন এগিয়ে যাচ্ছে। ২১ এপ্রিল এটি নোঙর করবে সেখানে।
১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় জলদস্যুমুক্ত হয় জাহাজটি। এর পর আরব আমিরাতের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন নাবিকরা। শুক্রবার বিকেল ৫টায় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬৮৭ নটিক্যাল মাইল এবং দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দর থকে ৯৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। এটি নিরাপদ জোন হিসেবে পরিচিত। এ জন্য দুশ্চিন্তাও কিছুটা কমেছে নাবিকদের। ফুরফুরে মেজাজে থাকার কিছু ছবিও পাঠিয়েছেন তারা।
বিষয় : এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া জলদস্যু দুবাই বন্দর
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh