লেগুনার ছাদের পেছনে যাত্রী ওঠানামা গেটের উপরে ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখা কেজিএমসি নামে চাঁদাবাজ গ্রুপ। গ্রুপটি প্রতি মাসে ৫০ টি লেগুনা থেকে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তোলে। রোববার রাজধানীর রাজউক ভবনের সামনের লেগুনা স্টান থেকে তোলা। ছবি: ন্যাশনাল ট্রিবিউন
রাজধানীর মতিঝিল জুড়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বাজার ও গাড়ি ষ্ট্যান্ড বানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতার সুবাদে সারা বছর লক্ষ লক্ষ টাকার এসব চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে চক্রগুলো।
সরেজমিনে জানা গেছে, মতিঝিল শাপলা চত্বরের পাশেই মিডলাইফ এর মূল ভবনের সামনের মেইন রাস্তা ও পাশে দিলকুশা রোডের দুই পাশ দখল করে বসে আছে অসংখ্য হকার।
মতিঝিল শাপলা চত্বরের সাথে সোনালী ব্যাংকের হেড অফিসের মূল গেটের সামনে দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী হয়ে আছে হকারদের অবস্থান। প্রতিটি দোকানের জন্য প্রতিদিন ১৫০টাকা থেকে ৩শত টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হকার ন্যাশনাল ট্রিবিউনকে বলেন, এই টাকা সব পুলিশ নিয়ে থাকেন। পুলিশি এখন বড় নেতা। মতিঝিল শাপলা চত্বরের পাশে সোনালী ব্যাংকের সামনে মেটলাইফ ভবনের ফুটপাত ও মেইন রাস্তার সড়কের উপর কয়েক শত দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা ও ১২০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। মূলত মতিঝিল শাপলা চত্বর দিলকুশা এলাকায় চারটি গ্ৰুপ ওই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে।
জানা গেছে, মতিঝিল শাপলা চত্বরের পাশে, দিলকুশা এলাকার চাঁদার টাকা চার গ্রুপের মধ্যে ভাগ করা হয়। এক একটি গ্রুপের মধ্যে ফুটপাতের উপর ভাসমান দোকান রয়েছে ৭০ থেকে ৮০টি করে। সামনে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মূল সড়কের উপর ফুটপাত বসার পজিশন নিচ্ছে চাঁদাবাজ বাহিনী। শাপলা চত্বর থেকে দিলকুশা এলাকা ও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেট পর্যন্ত এর আশপাশে যত মেইনরোড, অসংখ্য শাখা রোড রয়েছে, তার প্রত্যেকটি ফুটপাতের জায়গায় দখল করে প্রতিদিন কয়েকশ দোকানে চাঁদাবাজি করা হয় ।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সামনে লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে খিলগাঁও পর্যন্ত প্রতিদিন ৫০ টি লেগুনা চলাচল করে। প্রতিটি লেগুনা থেকে প্রতিদিন ৭০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন লেগুনার চালক জানান, আগে আমরা টাটা মোটরস নামে এক সিন্ডিকেটকে চাঁদা দিতাম। এখন সেটা নাম পরিবর্তন করে কেজিএমসি (KGMC) নামে সংগঠন হয়েছে। এখন এই নামের সংগঠনকে চাঁদা দেই। এই এলাকার লাইন ম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছে রুবি। বাকিরা আছে খিলগাঁও রেললাইনে। দিনে দুইবার করে চাঁদা তোলা হয়। সকাল ১০ টার দিকে আর বিকেল চারটার সময় এই চাঁদা দিতে হয় বলে জানান তারা।
রাস্তার পাশে সাজিয়ে রাখা লেগুনা।
দিলকুশার আনারস বিক্রেতা নাসির ন্যাশনাল ট্রিবিউনকে জানান, আজকেই ব্যবসা প্রথম শুরু করেছি। এখনো কাউকে চাঁদা দেয়া লাগেনি। তবে ব্যবসা শুরু করার আগে যেটা শুনেছি। হেঁটে হেঁটে যারা ব্যবসা করে তাদের চাঁদা দেয়া লাগে না। যারা পার্মানেন্ট ভাবে দোকান দিয়ে ব্যবসা করে তাদের চাঁদা দিতে হয়।
পথচারী শেখ মোঃ আলী হোসেন ন্যাশনাল ট্রিবিউনকে বলেন, 'বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা দোকানের পণ্য ফুটপাতের উপর সাজিয়ে রাখেন। ফলে আমরা ফুটপাথে হাঁটার অভ্যেস ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার উপর দিয়েই হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শহরের মধ্যে এছাড়া ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। তবুও টনক নড়ছে না সিটিকর্পোরেশন ও প্রশাসনের কর্তাদের।'
ফুটপাতে সাজিয়ে রাখা পণ্য।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবুল হোসেন মিয়া ন্যাশনাল ট্রিবিউনকে বলেন, 'ফুটপাতের উপরে শুধু অস্থায়ী ভাবে দোকান দেখা যেতো, এখন পাকা দোকানঘরও দেখা যায়। রাস্তাগুলোতে ব্যাঙের ছাতার মত বেসরকারি বাসের টিকিট কাউন্টার বসিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করা হয়। আজব এক দেশে বাস করছি।'
বিষয় : চাঁদাবাজি মতিঝিল ক্ষমতাসীন দল
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh