জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার (২৪) আত্মহত্যা ছিল অপ্রত্যাশিত। নিপীড়নের বিচার না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। মা তাহমিনা শবনম আক্ষেপ করে এ কথা বলেন।
তিনি আহাজারি করে বলেন, ‘মেয়ে আমার বিচারক হতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা তাকে বাঁচতে দিলো না। ও সাহসী মেয়ে ছিল। বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল।'
তিনি বলেন, শুক্রবার ইফতারের পর মেয়েকে বিষণ্ন দেখেছিলাম। মন খারাপ কেন জানতে চাইলে বলেছিল, এমনি। মেয়ে যে আত্মহত্যা করবে ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।
তাহমিনা শবনম বলেন, গত রোজায় সরকারি কলেজের অধ্যাপক স্বামীকে হারালাম। এবার মেয়েকে হারালাম। এক বছরের মধ্যে স্বামী ও মেয়ে আমার কাছ থেকে চলে গেল।
তিনি জানান, এক বছর আগে থেকে অবন্তিকার এক সহপাঠী তাকে নানাভাবে নিপীড়ন করত। এ নিয়ে মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে অভিযোগ করে। তবে সহকারী প্রক্টর ওই ঘটনার বিচার করেননি, উল্টো মেয়েকে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। ওই ছেলের পক্ষ নেন। এতে ওই ছেলে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকে, হুমকি দেয়। এসব ঘটনার বিচার চেয়ে না পেয়ে তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
ওই সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শুক্রবার রাতে কুমিল্লা শহরে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। এদিকে আত্নহত্যার ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রত বিচারের আশ্বাস দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মানকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে এসব কথা বলেন উপাচার্য। এর আগে উপাচার্যের নির্দেশে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাও এলাকার নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর রাত ১১টার দিকে চিকিৎসকরা অবন্তিকাকে মৃত ঘোষণা করেন।