ফাইল ছবি
আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান ঘিরে অতিমুনাফা লাভে ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন কৌশলে মেতে উঠছেন। রোজার সময় ঘনিয়ে আসতেই তুলনামূলক দাম কম, সাধারণ বা নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে চাহিদা বেশি- এমন খেজুরকেই টার্গেট করেছেন ব্যবসায়ীরা। আর এসব খেজুর চট্টগ্রামে ফলমণ্ডীর পাইকারি বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কার্টনপ্রতি ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকা অতিরিক্ত বেড়েছে। অন্যদিকে সচরাচরই দাম বেশি থাকে, এমন খেজুরে কার্টনপ্রতি বাড়ানো হয়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা।
পাইকারি বাজারে বিভিন্ন জাতের খেজুরের মধ্যে জাহিদি, ফরিদা ও ভেজা জাতের দাম কম থাকায় সাধারণ মানুষ এসব কিনে থাকে। তবে এবার এসব খেজুরেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কার্টন জাহিদি খেজুর ৫৫০ টাকা, ফরিদা জাত ৫০০ টাকা ও ভেজা খেজুর কেজিতে ৩০০ টাকা করে অতিরিক্ত বেড়েছে। তবে যেসব খেজুরের দাম সব সময় বেশি থাকে, সেগুলোর দাম বাড়ানো হয়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। যেমন- প্রতি কার্টন মাবরুর, গাবাজ, নাগাল ও সাফাবি জাতের খেজুরে ২০০ টাকা এবং রাবেয়া খেজুরে ১০০ টাকা বেড়েছে।
আমদানিকারকরা বাড়তি দরে খেজুর বিক্রি করায় দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে আমদানিকারকদের দাবি, খেজুর আমদানিতে যে পরিমাণে শুল্ক কমানো হয়েছে, সেটা দাম কমার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নয়। কারণ শুল্ক কমিয়ে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য বাড়ানো হয়েছে।
ফলমণ্ডীর মেসার্স তুহিন এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ‘আমরা ভেবেছি সরকার শুল্ক কমানোর পর খেজুরের দাম কমে যাবে। কিন্তু আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকারকরা বাড়তি দরে বিক্রি করছেন। এর প্রভাব সব জায়গায় পড়ছে। দাম বাড়ার কারণে আমাদের বেচাবিক্রিও কম।’
চট্টগ্রামে খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ বলেন, সরকার একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খেজুর আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ সুযোগ থাকবে। কিন্তু পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য তিন গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই খেজুরের দাম বেড়েছে।
এদিকে সূত্র জানায়, আমদানি করা খেজুর তিন বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। ফলমণ্ডীতে এখন যেসব খেজুর রয়েছে, তা গত বছর আমদানি করা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব খেজুরের মধ্যে প্রতি কার্টন জাহিদি ১ হাজার ৮৭০ থেকে ১ হাজার ৯২০ টাকা, ভেজা খেজুর ১ হাজার ৭০০ টাকা, আজোয়া মানভেদে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৭০০ টাকা, মাবরুর ৩ হাজার ৮০০ টাকা, নাগাল ২ হাজার, রাবেয়া ২ হাজার ৬০০, ফরিদা ১ হাজার ৬৮০ ও সাফাবি মানভেদে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায় কিনেছেন পাইকাররা।
রোজা ঘনিয়ে আসায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে ৫৫০ টাকা অতিরিক্ত বেড়ে প্রতি কার্টন জাহিদি খেজুর বর্তমানে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ফরিদা ৫০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২০০, ভেজা খেজুর ৩০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার ৫০, মাবরুর ২০০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার, নাগাল জাতের খেজুর ১৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২০০, রাবেয়া খেজুর ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭৫০ ও সাফাবি খেজুর ২০০ টাকা বেড়ে মানভেদে ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে আজোয়া খেজুরের দাম এমনিতেই বেশি থাকায় নতুন করে দাম বাড়ানো হয়নি। পাইকাররা আগের ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে মেজদুল ও গাবাজ জাতের খেজুরের দাম কমেছে। ৬০০ টাকা কমে প্রতি কার্টন মেজদুল ৪ হাজার ৪০০ টাকায় এবং ২০০ টাকা কমে প্রতি কার্টন গাবাজ ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম কমলেও এসব খেজুর সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। অথচ রমজান ঘিরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর আমদানি হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। তারা জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩৮ হাজার ৯৯১ মেট্রিক টন খেজুর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করেছেন আমদানিকারকরা। পাইপলাইনে আরও রয়েছে। সব মিলিয়ে রোজার আগে ৬০-৬৫ টন খেজুর আসবে।
সূত্র জানায়, রমজান ঘিরে ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে খেজুর আমদানি বাড়ে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আসা পণ্যের মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে ৮৬১ টন, আগস্টে ৩৫৩ টন, সেপ্টেম্বরে ৬৯৯ টন, অক্টোবরে ২ হাজার ৩৪১ টন, নভেম্বরে ২ হাজার ১১০ টন, ডিসেম্বরে ৬ হাজার ১৬ টন, জানুয়ারিতে ৬ হাজার ১৬৯ টন ও ফেব্রুয়ারিতে ২০ হাজার ৪৪২ টন আমদানি করা খেজুর খালাস হয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, রমজান ঘিরে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর আসছে। চলতি অর্থবছরে অন্যান্য মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আসা সবচেয়ে বেশি খেজুর খালাস করেছেন আমদানিকারকরা। হাতে এখনো সময় আছে। রোজার আগে খালাসের পরিমাণ আরও বাড়বে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘সরকার শুল্ক কমিয়েছে। নির্ধারিত শুল্কে এখন খেজুর খালাস করতে পারছেন আমদানিকারকরা। পণ্যটির পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে বলেও আমরা জানতে পেরেছি। তাহলে এত খেজুর গেল কোথায়? প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির অভাব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। তাই রোজার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন।’
বিষয় : জাতীয় মাহে রমজান
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh