× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মহাসড়কে বেড়েই চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি

ন্যাশনাল ট্রিবিউন রিপোর্ট

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:০৭ এএম । আপডেটঃ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:০৭ এএম

ফাইল ফটো

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখী উদ্যোগেও কমছে না ঢাকাসহ দেশের মহাসড়কগুলোতে চাঁদাবাজি। দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে চাঁদাবাজরা। অভিযোগ রয়েছে, এই চাঁদার ভাগ যায় সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, কাউন্সিলর, দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্য, পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতাসহ কয়েক ব্যক্তির হাতে। এ কারণে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে মহাসড়কে চাঁদা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনো বন্ধ হয়নি। চাঁদাবাজির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট থানা ও ফাঁড়িতে ভুক্তভোগীরা দিলে কোনো প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্বৃত্তদের চাঁদা আদায়ের কারণে প্রভাব পড়ছে বাজারে। হুহু করে বাড়ছে বিভিন্ন দ্রব্যের দাম।

সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদাবাজ রুখতে সক্রিয় হয়েছে র‌্যাব। গত ৩ ও ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকায় র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে ১০১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান অব্যাহত আছে বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

জানা গেছে, মহাসড়কে লাঠি হাতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে চাঁদা আদায় করছে দুর্বৃত্তরা। কেউ কেউ ভুয়া রসিদ দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। টাকা না দিলে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে গাড়ির চাবি। ঢাকার তিন প্রবেশপথসহ ৭টি স্পটে সক্রিয় চাঁদাবাজরা। দুর্বৃত্তদের ধরতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকলেও হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সদস্যরা উদাসীন রয়েছেন। তারা শুধু মহাসড়ক টহলেই ব্যস্ত রয়েছেন। চাঁদাবাজরা শুধু রাতে নয়, দিনের বেলায়ও সক্রিয় রয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা এসেছে, যারাই সড়কে চাঁদাবাজি করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। 

এ বিষয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (হাইওয়ে পুলিশ) মো. শাহাবুদ্দিন খান গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মহাসড়ককে নিরাপদ রাখতে হাইওয়ে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে। যদি কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আসে তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা জানান, ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, মহাসড়কে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামে চাঁদা আদায় করা হয়। ঢাকায় কিছু কিছু এলাকায় সিটি করপোরেশনের রসিদের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু দেখা গেছে ওই সব এলাকার সিটি করপোরেশনের যে টেন্ডার সীমা ছিল তা আগেই পার হয়েছে। ওই এলাকাগুলোতে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করছে দুর্বৃত্তরা। তাদের রুখতে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে। 

এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা যেখানেই চাঁদাবাজির অভিযোগ পাই, তখন দ্রুতই পুলিশের কাছে অভিযোগ দিই।’

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিছু কিছু এলাকায় তারা চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকেন। কিন্তু অনেক এলাকা আছে যেখানে তাদের কাজ করার এখতিয়ার নেই। যেমন বিভাগীয় এলাকার মধ্যে তাদের কাজের সীমা রয়েছে। 

ডিএমপিতে কোনো অভিযান চালাতে গিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। তবে তারা মহাসড়ককে চাঁদাবাজি মুক্ত করতে কাজ করছেন।

ভুক্তভোগী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গ থেকে একটি মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানসহ অন্যান্য বড় যানবাহন ঢাকায় ঢুকলে ৬টি স্থানে চাঁদা দিতে হয়। স্থানগুলো হচ্ছে রাজশাহীর পবা, নাটোরের গুরুদাসপুর ব্রিজের পাশ, সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের পাশ, গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও সাভারের আশুলিয়া। আবার ঢাকায় ঢোকার পর সেই পরিবহনকেই একাধিক স্থানে চাঁদা দিয়ে বিভিন্ন বাজার ও স্ট্যান্ডে যেতে হয়। প্রতিটি স্থানে প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে নেয় চাঁদাবাজরা। তারা হাতে লাঠি নিয়ে পরিবহনের চালকদের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের রসিদ ধরিয়ে দেয়। যদি চাঁদা না দেন তাহলে সেই পরিবহন আর সামনে যেতে পারে না। পরে তারা বাধ্য হন চাঁদা দিতে। 

সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে আলাদা রুটে ও ঢাকায় আরও অনেক রুটে বাড়তি টাকা দেওয়ার কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যে পণ্যটি পাইকাররা কম দামে বিক্রি করার জন্য গ্রাম থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখন বাড়তি চাঁদা দেওয়ার কারণে সেটি আর তারা করতে পারেন না। 

জানা গেছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ভুয়া চাঁদা আদায়ের রসিদ জব্দ করা হয়। এ ছাড়া গত ৭ ফেব্রুয়ারি সড়কে লাঠি হাতে পরিবহনে চাঁদাবাজির সময় ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এসব এলাকাতে আগে থেকেই গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছিল র‌্যাব। পরে হাতেনাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

র‌্যাব জানায়, কোনো পরিবহন ঢাকায় ঢোকার মুহূর্তে রাজধানীর তিনটি স্থান বাবুবাজার, কারওয়ান বাজার ও সাইনবোর্ড এলাকায় চাঁদাবাজির শিকার হয়। এ ছাড়া গুলিস্তান, ইত্তেফাক মোড়, টিটিপাড়া, লালবাগ, বেড়িবাঁধ, গাবতলী ও ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় চাঁদা দিতে হয়। 

গতকাল দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে সবুর আহমেদ নামে এক ট্রাকের চালক জানান, মহাসড়কের একাধিক স্থানে তাদের চাঁদা দিতে হয়। কেন চাঁদা চাওয়া হচ্ছে সেই বিষয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। অনেক সময় দুর্বৃত্তরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে থাকে। 

লালবাগের খনন করা আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের পাশে এক যুবককে রসিদ হাতে ট্রাক থামিয়ে চাঁদা তুলতে দেখা যায়। তিনি নিজের নাম রাকিব জানালেন। কোন প্রতিষ্ঠানের চাঁদা তোলা হচ্ছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এই প্রতিবেদককে কোনো উত্তর দেননি।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.