সড়ক পরিবহন, বিদ্যুৎ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দেশ বদলের জন্য মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে আসার এবং একে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে মেধাবী ও সৎ নেতৃত্ব ছাড়া দেশের মানুষ যে পরিবর্তন প্রত্যাশা করে, তা কখনোই বাস্তবে রূপ নেবে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করার সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তাদের কর্মজীবনের পথ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন। তিনি বলেন,

তিনি রাজনীতিকে শুধু 'ক্ষমতার খেলা' হিসেবে না দেখে 'মানুষের জীবন বদলানোর একটি দায়িত্ব' হিসেবে দেখার তাগিদ দেন। তাঁর মতে, রাজনীতি একটি সম্মানজনক ও জরুরি পেশা, যেখানে মেধাবী ও সৎ মানুষের উপস্থিতি অপরিহার্য। এই প্রসঙ্গে তিনি নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের উদাহরণ দেন এবং শিক্ষার্থীদের তাঁর আত্মজীবনী পাঠ করার পরামর্শ দেন।

সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তরুণদের নৈতিকতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন ফাওজুল কবির খান। তিনি অর্থ উপার্জনের দুটি পথের কথা উল্লেখ করেন:

১. উৎপাদন, উদ্ভাবন ও পরিশ্রমের পথ (সৃষ্টির মাধ্যমে ধনী হওয়া)।

২. ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার পথ।

তিনি তরুণদের প্রথম পথটি বেছে নেওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, "ধনী হও, কিন্তু স্টিভ জবস বা বিল গেটসের মতো সৃষ্টির মাধ্যমে। ক্ষমতার করিডরে ঘুরে ধনী হয়ো না।"

তিনি পরোক্ষভাবে কিছু ব্যবসায়ী-ধনকুবেরের সমালোচনা করে বলেন যে কেউ কেউ কর না দিয়ে বা ব্যাংকঋণ ফেরত না দিয়েও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শুধু ভালো ফল বা সিজিপিএ নয়, বরং প্রকৃত দক্ষতা, নৈতিকতা ও সাহসই মানুষকে সামনে এগিয়ে নেয়।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আক্ষেপ করে ফাওজুল কবির খান বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে বিজ্ঞানে এখনো কোনো নোবেলজয়ী নেই—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ভাবনার বিষয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নোবেল জেতার স্বপ্ন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কোনো সাড়া না পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু পরীক্ষার ফলের চিন্তা না ঢুকিয়ে বড় স্বপ্ন দেখার সাহস এবং বৈশ্বিক উৎকর্ষের স্বপ্ন তৈরি করতে হবে।

বক্তব্যের শুরুতে ফাওজুল কবির খান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের পাশাপাশি গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি উল্লেখ করেন, ওই আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য ও ইতিহাসে স্মরণীয়।

তিনি গ্র্যাজুয়েটদের মনে করিয়ে দেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কেবল চাকরির বাজারে ঢোকার একটি 'পাসপোর্ট', কিন্তু জীবন যুদ্ধে সফলতা নির্ভর করবে প্রকৃত দক্ষতা ও সক্ষমতার ওপর।