× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে কোনো সংস্কার টিকবে না: প্রধান বিচারপতি

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

২২ নভেম্বর ২০২৫, ২১:০৩ পিএম । আপডেটঃ ২২ নভেম্বর ২০২৫, ২১:০৪ পিএম

আজ শনিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত 'বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন' শীর্ষক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ যখন একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পথে হাঁটছে, তখন বিচার বিভাগকে তার নীতিতে স্থির থাকার ওপর জোর দিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে কোনো সংস্কারই টিকবে না। একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, বর্তমান সংবিধান ত্রুটিপূর্ণ হলেও এটিই বিচার বিভাগের বৈধতার একমাত্র ভিত্তি।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। চতুর্থবারের মতো আয়োজিত এই সম্মেলনে ৮৫টি দেশের দুই শরও বেশি প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।

প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তৃতায় গত জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে এনে এটিকে 'বিরল স্বচ্ছতার এক মুহূর্ত' হিসেবে আখ্যা দেন, যা বাংলাদেশকে তার সাংবিধানিক জীবনের বিন্যাস পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছিল। তিনি বলেন, এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে আইনের শাসন কোনো আমলাতান্ত্রিক আচার বা বংশগত অলংকার নয়, বরং এটি সেই নৈতিক স্থাপত্য যা বৈধতাকে সুরক্ষিত রাখে।

তিনি মন্তব্য করেন, ‘জুলাই বিপ্লব সংবিধানের সঙ্গে নাগরিকদের সম্পর্ক বিশুদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছিল। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সাড়াদানের ক্ষমতা—এই তিনটি গুণ হয়ে উঠেছিল জনসচেতনতার মূল সুর। অনিশ্চিত সেই মাসগুলোতে বিচার বিভাগ একমাত্র সম্পূর্ণ কার্যকর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থির চিত্তে এবং দৃঢ় অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছিল।’

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বর্তমান সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘কোনো রকম অলংকার ব্যবহার না করেই আমাদের নির্জলা এই সত্যটা স্বীকার করে নিতে হবে যে বর্তমান সংবিধান যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক, এটি বিচার বিভাগের বৈধতার একমাত্র ভিত্তি। এর মৌলিক কাঠামো রাজনীতিতে যতই বিতর্কিত হোক না কেন, গত এক বছরে আমাদের সঠিক পথে এগিয়ে যেতে এটিই পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাহীর বাড়াবাড়ি, জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া আইন প্রণয়নজনিত বিকৃতি কিংবা বিচার বিভাগের সীমা লঙ্ঘন—সব ক্ষেত্রেই আদালতকে বারবার ক্ষমতার পৃথক্‌করণ, বিচারিক স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক শাসন, অবিচ্ছেদ্য মৌলিক অধিকার এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব এই অপরিবর্তনীয় নীতিগুলোর কাছে ফেরত যেতে হয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর সংস্কারের জন-আকাঙ্ক্ষার দিকটি তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ভবিষ্যৎ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এমন প্রেক্ষাপটও উত্তরাধিকার সূত্রে পেতে পারে, যার সঙ্গে বর্তমান রূপান্তরকালীন মুহূর্তের খুব বেশি সাদৃশ্য না-ও থাকতে পারে। তিনি সতর্ক করে দেন, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক পুনর্বিন্যাস একটি নতুন সামাজিক চুক্তি বা হয়তো একটি নতুন সাংবিধানিক ধারা যুক্ত করতে পারে।

‘এমন মুহূর্তে বিচার বিভাগ তার সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হবে—কীভাবে এই বৃহত্তর পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে সংবিধানের মূল চেতনা না হারিয়ে যাতে এগিয়ে যাওয়া যায়। দৃষ্টি, প্রজ্ঞা ও সাহস—এই তিন গুণ নির্ধারণ করবে বিচার বিভাগ দ্রুত পরিবর্তিত রাষ্ট্রে কতটা প্রাসঙ্গিক থাকতে পারে,’ বলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘আমাদের কাজ তাই সূক্ষ্ম: বর্তমান সংবিধানের অখণ্ডতা রক্ষা করা—একই সঙ্গে মানসিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত হওয়া, জনগণ ভবিষ্যতে যা পুনর্নির্মাণ করতে পারে তার জন্য। আমরা যদি ব্যর্থ হই, তবে কোনো সংস্কার—যতই তা প্রশংসিত হোক—দুর্বল শাসন বা ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষয়রোগ থেকে টিকবে না।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, জাতীয় স্বার্থ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার কথা মাথায় রেখে দক্ষিণ এশিয়াতে সবার অংশীদার হিসেবে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ। তিনি জোর দেন যে বঙ্গোপসাগর একটি কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ এখানে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের অস্থিতিশীলতার প্রভাব পড়ার কথা স্বীকার করে, ‘আমাদের বঙ্গোপসাগরের অপরিসীম সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে এটিকে বিকাশ ও সমৃদ্ধির করিডরে রূপান্তর করতে হবে।’

তথ্যপ্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, এআই, ডিপফেক, পরিকল্পিত ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য—এসবই কূটনীতি, গণতন্ত্র এবং শাসন ব্যবস্থাকে নতুন রূপে পুনর্গঠন করছে। বাংলাদেশ তথ্য ক্ষেত্রকে রক্ষা করতে এবং নিরাপত্তা ও অধিকার উভয়কেই সুরক্ষিত রাখে, এমন নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রচারে প্রস্তুত।

অনুষ্ঠানে সিজিএসের সভাপতি এবং সম্মেলনের চেয়ার জিল্লুর রহমান উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন এবং ধন্যবাদ বক্তৃতা দেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.