× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ভূমিকম্পে দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু

একপাশে মেয়ের দাফন, আরেকদিকে স্ত্রীর জন্য স্বামীর ছোটাছুটি

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

২২ নভেম্বর ২০২৫, ০০:৩২ এএম । আপডেটঃ ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৮ এএম

ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে নিহত ১০ মাস বয়সী শিশু ফাতেমা। ছবিটি সংগৃহীত।

শক্তিশালী ভূমিকম্প কেড়ে নিয়েছে ১০ মাস বয়সী শিশু ফাতেমার প্রাণ। অন্যদিকে, দেয়াল ধসে গুরুতর আহত হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন শিশুটির মা কুলসুম বেগম (৩০)। মর্মান্তিক এই ঘটনায় একদিকে যেমন সন্তানের দাফন সম্পন্ন হলো, অন্যদিকে আহত স্ত্রীকে সুস্থ করার জন্য স্বামীর ছোটাছুটি—সব মিলিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবদুল হকের পরিবার।

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পরই রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকায় ঘটে এই দুর্ঘটনা। স্বজনদের তথ্য অনুযায়ী, নিজের ভাড়া বাড়ি থেকে ১০ মাস বয়সী ফাতেমাকে কোলে নিয়ে কুলসুম বেগম তিন বছর বয়সী বড় মেয়ে নুজাইবা জান্নাতের কাছে যাচ্ছিলেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই রাস্তার পাশে ধসে পড়া একটি দুর্বল সীমানাপ্রাচীরের নিচে চাপা পড়েন মা ও দুই শিশু। ইটের চাপায় ঘটনাস্থলেই মাথা থেঁতলে যায় ফাতেমার, মারা যায় সে। আহত কুলসুমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি না পাওয়ায় টানা ৯ ঘণ্টা তাঁকে নিয়ে অমানবিক ছোটাছুটি করতে হয়েছে স্বজনদের।

স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ছুটতে গিয়ে নিজের মেয়ের দাফনেও অংশ নিতে পারেননি বাবা আবদুল হক। চরম শোকের মাঝে বিকেলে মা-বাবার অনুপস্থিতিতেই সম্পন্ন হয় ছোট্ট ফাতেমার দাফন।

ভূমিকম্পের শিকার কুলসুম বেগমের চিকিৎসা নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে স্বজনদের।

গুরুতর আহত কুলসুম বেগমের মাথায় আঘাত লেগেছে। তিনি ইশারায় কথা বলছেন এবং এখনো সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছেন।


ছোটাছুটি

কুলসুমের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ হোসেন জানান, বেলা ১১টার দিকে কুলসুমকে রূপগঞ্জের ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার পর 'শয্যা খালি নেই' বলে ভর্তি করা হয়নি। এরপর ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালেও শয্যা পাওয়া যায়নি।


স্বামীর হতাশা

দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে করে ঘোরার পর ক্লান্ত স্বজনেরা বাধ্য হয়ে কুলসুমকে ঢাকার শ্যামবাজার এলাকায় স্বামীর ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। মোহাম্মদ হোসেন জানান, এই সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াই দিতে হয়েছে প্রায় ১১ হাজার টাকা। সরকারি হাসপাতালে প্রত্যাশিত চিকিৎসা না পাওয়ায় এখন টাকার সংস্থান হলে বেসরকারি হাসপাতালে কুলসুমকে ভর্তি করানোর চেষ্টা চলছে।

অসুস্থ কুলসুম তাঁর আদরের ফাতেমার মৃত্যুর খবর এখনো জানতে পারেননি।

পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, আতঙ্কিত কুলসুম যখন শিশু ফাতেমাকে কোলে নিয়ে তার মায়ের (ফাতেমার নানির) বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন, তখন প্রতিবেশী জেসমিন বেগমও আতঙ্কে ঘর থেকে বের হয়ে একই স্থানে আশ্রয় নেন। ঠিক তখনই সড়কের পাশের একটি পিলারহীন ও রডবিহীন সীমানাপ্রাচীর ধসে মা-মেয়ে এবং জেসমিন বেগমের ওপর পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ রনি বলেন, "আমরা ইটের নিচ থেকে শিশুটির মরদেহ বের করি। কুলসুম তখন সংজ্ঞাহীন ছিলেন। ফলে ফাতেমার মৃত্যুর খবর তিনি জানতে পারেননি।"

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে দেয়ালটি ধসে পড়েছে, সেটি ছিল প্রায় ১০ ফুট উঁচু, কিন্তু এতে কোনো পিলার বা রড ব্যবহার করা হয়নি। এ ধরনের দুর্বল নির্মাণই দুর্ঘটনার কারণ।

ইউএনও নিহত শিশুর দাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।

পরে কুলসুমের উন্নত চিকিৎসা না পাওয়া প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, "চিকিৎসা না পাওয়াটা দুঃখজনক। স্বজনেরা প্রথমে জানিয়েছিলেন তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা যে শয্যা পাননি, সেটা জানা ছিল না। আমরা কুলসুমের চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।"

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.