ভূমিকম্পের কারণে সড়ক ভেঙে পড়েছে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আজ শুক্রবার সকালে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। এই দুর্যোগে গুরুতর আহত হয়েছেন ছয় শতাধিক মানুষ। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর তথ্যমতে, আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বয়ে যাওয়া এই মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পটির (রিখটার স্কেলে ৫.৭) উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী এলাকায়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের কম্পনে সারা দেশেই তৈরি হয় আতঙ্ক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ (রাত ৮টা পর্যন্ত) হালনাগাদ তথ্যে জানা যায়, সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ৬০৬ জন আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৬৭ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং গুরুতর অবস্থায় ১৬ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আরও অনেক রোগী এখনো হিসাবের বাইরে থাকায় মোট আহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ভূমিকম্পের সরাসরি প্রভাবে হতাহতের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীতে।
পুরান ঢাকার কসাইটুলির একটি ভবনের রেলিং ধসে তিন পথচারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহতরা হলেন—স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম (২০), আব্দুর রহিম (৪৮) এবং তার ছেলে মেহরাব হোসেন (১২)। নিহত আব্দুর রহিম লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রকোনার বাসিন্দা হলেও সুরিটোলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ঢাকার মুগদার মদিনাবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে মাথায় আঘাত লেগে নিরাপত্তাকর্মী মাকসুদ (৫০) নিহত হন। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদী জেলার মাধবদী এলাকায় হওয়ায় এই জেলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা তুলনামূলক বেশি ছিল। এখানে মোট ৪ জন নিহত হয়েছেন।
নরসিংদীর চিনিশপুরে নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল থেকে ইট পড়ে একটি বসতবাড়ির সানশেড ভেঙে পড়ে। এতে গুরুতর আহত হয় মো. ওমর (৮)। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সে মারা যায়। এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার বাবা দেলোয়ার হোসেনও পরে মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় ওমরের দুই বোনও আহত হন।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়ায় মাটির ঘর ধসে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫)।
ডাঙ্গা ইউনিয়নে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত (স্ট্রোক) হয়ে নাসিরউদ্দিন (৬৫) মারা যান বলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় দেয়াল ধসে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকায় দেয়াল ধসে চাপা পড়ে ১০ মাসের শিশু ফাতেমার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ফাতেমার মা গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন। স্থানীয় প্রশাসন শিশুটির পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলায় ভূমিকম্প চলাকালীন আতঙ্কে গাছ থেকে পড়ে আহত হন ফোরকান মিয়া (৪৫)। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজকের এই ভূমিকম্পটি মাঝারি মাত্রার ৫.৭ রিখটার স্কেল ছিল। উৎপত্তিস্থল তুলনামূলকভাবে দেশের কাছাকাছি হওয়ায় এর কম্পন দেশের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে তীব্রভাবে অনুভূত হয়।
বিষয় : ভূমিকম্প
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
