আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থান'-এর সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল-কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন-কে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হিসেবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে। মোট পাঁচটি অভিযোগে দায়ের হওয়া এই মামলাটি ছিল গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায়।
সোমবার দুপুর ১২:৩০ মিনিটের দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয় এবং বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার রায়ের শেষ অংশ পাঠ করেন। ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ে মোট ছয়টি অংশ রয়েছে। রায়ে ট্রাইব্যুনাল নিশ্চিত করেন যে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনা অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রায় ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রতিক্রিয়া জানান, "জুলাই বিপ্লবের শহীদ, রাষ্ট্র এবং এ দেশের মানুষ ন্যায়বিচার পেয়েছে। এই রায় আইনের শাসন ও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি যুগান্তকারী মাইলফলক।" তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনা যেদিন থেকে গ্রেপ্তার হবেন, সেদিন থেকে তার সাজা কার্যকর হবে।
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছিল:
বিচারকার্য চলাকালীন, ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন অডিও, ভিডিও ও তথ্যউপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। রায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, এবং পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্টের অংশবিশেষ পাঠ করে শোনানো হয়। বেলা সোয়া ১টার দিকে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ বিভিন্ন জনের টেলিফোন কথোপকথনগুলোও আদালতে শোনানো হয়।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী, র্যাব, এবং বিজিবি সদস্যদেরও ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়।
টিএসসিতে উল্লাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বড় পর্দায় রায় ঘোষণার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ফাঁসির আদেশের পর টিএসসি এলাকায় জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল করে এবং 'খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই' স্লোগানে মুখরিত করে তোলে। ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম এবং শহীদ মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ-সহ অনেকে ট্রাইব্যুনাল চত্বরে উপস্থিত ছিলেন।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে উত্তেজনা: দুপুরের দিকে দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়া হলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
