সাবেক অর্থ, পররাষ্ট্র ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী এবং দিনাজপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী আর নেই। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কিডনিজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন এবং গত ১৩ দিন ধরে বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন।
আজ রাতে ধানমন্ডির নিজ বাসার সামনে তাঁর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে এবং রাতেই তাঁকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ ও পেশাদার কূটনীতিক। তাঁর বর্ণময় কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
জন্ম ও শিক্ষা: তিনি ১৯৪৩ সালের ২ জুন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের খামার বিষ্ণুগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
শিক্ষকতা: ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কূটনৈতিক জীবন:
- ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিস (পিএফএস)-এ যোগদান করেন।
- ১৯৬৮ সালে নিউইয়র্কে পাকিস্তানের ভাইস-কনসাল হিসেবে নিযুক্ত হন।
- ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন এবং মে মাসে মুজিবনগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত হন।
- মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং জাতিসংঘসহ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
রাজনৈতিক ও মন্ত্রিত্ব জীবন:
- সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন:
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী (২০১২-২০১৩)।
- পররাষ্ট্রমন্ত্রী (২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি)। তাঁর সময়েই বাংলাদেশ ও ভারতের সমুদ্রসীমা নির্ধারণী মামলার নিষ্পত্তি ও ছিটমহল বিনিময় হয়।
- অর্থমন্ত্রী (২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট)।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে একই বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।