জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে দাবিপূরণের আল্টিমেটাম দিচ্ছেন ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’-এর আহ্বায়ক মাসুদ রানা ও অন্যান্য সদস্যরা।
২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে নিহতদের ‘শহীদ’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতিসহ সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো ‘জুলাই সনদে’ পূর্ণাঙ্গভাবে অন্তর্ভুক্ত ও বাস্তবায়ন না করলে আগামী রোববার (তারিখ দিনটি বসবে) দেশের প্রতিটি জেলায় মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের ১২ নম্বর ফটকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই আল্টিমেটাম দেন ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’-এর আহ্বায়ক মাসুদ রানা। একই সঙ্গে তিনি আজ দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় এবং সড়কে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ রানা বলেন, “আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। আগামী রোববার বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশের প্রতিটি জেলা শহরের মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে। এই আন্দোলন কোনো দলের নয়, এটি জনগণের। তাই দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের প্রতি আহ্বান জানাই—আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন।”
মাসুদ রানা সরকার ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, “আমরা এই রাষ্ট্রের জন্য, এই জাতির স্বাধীনতার নতুন স্বপ্নের জন্য জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছিলাম। আমাদের রক্তের বিনিময়ে যে জুলাই সনদ তৈরি হয়েছে, সেখানে সেই রক্তের স্বীকৃতি থাকা উচিত ছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেই স্বীকৃতি অস্বীকার করা হয়েছে। আমরা রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি, আর এখন রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।”
দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে—নিহত শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা এবং আহতদের জন্য আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা।
জুলাই যোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক জানান, দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছেন। প্রতিটি জেলায় আহত ব্যক্তিরা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে গিয়ে দাবিনামা জমা দিয়েছেন। গত ১৩ অক্টোবর শাহবাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে গিয়ে তারা স্মারকলিপি দেন এবং ১৪টি মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, এমনকি প্রধান বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছেও দাবিগুলো লিখিত আকারে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, সরকার ও ঐকমত্য কমিশন আমাদের ন্যায্য দাবি বুঝবে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্যারও আমাদের দাবিগুলো দেখে কেবল একটি শব্দ নিয়ে আপত্তি করেছিলেন, আমরা সেটি সংশোধন করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়ে ছিলেন যে এই দাবিগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন সনদ প্রকাশিত হলো, আমরা দেখলাম—আমাদের কোনো দাবি বাস্তবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।”
মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, আজ সকালে সংসদ ভবনের গেটে তারা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তারা সকাল ১০টা পর্যন্ত অবস্থান করার এবং কোনো বিশৃঙ্খলা না করার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ কোনো আলোচনা বা সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে পুলিশ আক্রমণ শুরু করে।
তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আমাদের পেছন দিক থেকে পুলিশ হঠাৎ লাঠিচার্জ শুরু করে। কেউ বুঝে ওঠার আগেই টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। যারা মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন, তাদের বুট দিয়ে পাড়ানো হয়েছে। এমনভাবে আক্রমণ চালানো হয়েছে যেন আমরা মানুষ না, কোনো প্রাণী। আমাদের মধ্যে শতাধিক নতুন করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।”
আহ্বায়ক মাসুদ রানা পুলিশের ভূমিকাকে শেখ হাসিনার আমলে তৈরি হওয়া মানসিকতার ফল বলে অভিযোগ করেন। তিনি মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশ পুলিশে এখনো ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি সদস্য হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া। এদের ডিএনএ টেস্ট করে নেওয়া হয়েছিল—তাদের বংশে আওয়ামী লীগ আছে কি না। তাই এই বাহিনী এখনো দলীয় সংস্কৃতিতে নিমজ্জিত। জুলাই বিপ্লবের পরেও তারা নিজেদের চরিত্র বদলায়নি। এই বাহিনী সংস্কার না করলে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।”
বিষয় : জুলাই সনদ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh