উৎসবমুখর পরিবেশে আগামী শুক্রবার ঐতিহাসিক ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, পুরো জাতি এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শরিক হবে এবং এটি জাতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জুলাই সনদ নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, "আমরা উৎসবমুখরভাবে সেখানে যাব, এই দলিলে সই করব এবং উৎসব করব। পুরো জাতি এটায় শরিক হবে। আপনারা তাদের সামনের সারির মানুষ, যারা প্রকৃত সই করছেন। সারা দেশের মানুষ চিন্তার মধ্যে, তাদের ভাবনার মধ্যে আপনাদের সঙ্গে সই করছে।"

রাজনৈতিক দলের নেতাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আপনারা সবাই একত্র হয়ে একটি জায়গায় এসেছেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবে।

তিনি আরও বলেন, "আপনাদের দীর্ঘদিনের আলোচনার ফসল জুলাই সনদ। আপনারা অনেক ভেবে-চিন্তে মতামত দিয়ে জুলাই সনদকে একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে এনেছেন। এতে আপনারা ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছেন।"

ড. ইউনূস বলেন, "যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন সেটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে না পৃথিবীর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। আপনারা কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সমাধানে এসেছেন। নিজেরা সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন, একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। এজন্য আজকে জুলাই সনদ রচনা হয়েছে। সেজন্য আমি একা নই, জাতির সবাই অভিভূত হয়েছে।"

প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তী অধ্যায় সঠিকভাবে রচিত হলো এই সনদের মাধ্যমে। তিনি যোগ করেন, "যে সংস্কারের কথা আমরা মুখে বলে যাচ্ছিলাম, আপনারা সেই সংস্কার, প্রকৃতপক্ষে যে সংস্কার হবে, তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। কাজেই আমরা এই জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সারা জাতি বড় রকমের উৎসবের মধ্যে শরিক হবে।"

ড. ইউনূস আরও জানান, স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যে কলম ব্যবহার করা হবে, সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে এবং বিতর্কগুলো ভিডিও ও বই আকারে সংরক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, "জুলাই সনদ জাতির জন্য একটা মস্ত বড় সম্পদ হয়ে রইলো।"

ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, সনদ ও নির্বাচন কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। উত্তরণটা কীভাবে হবে, তার উত্তরও জুলাই সনদে দেওয়া আছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেভাবে সন্তোষজনকভাবে রূপান্তরটি হবে।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ়তার সাথে বলেন, "কথার কথা নয়, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে।" তিনি যোগ করেন, নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে সরকার সব পদক্ষেপ নেবে এবং এটি ঐকমত্য সনদেরই অংশ। তিনি নির্বাচন যুতসই করার বিষয়ে সবাইকে এক থাকার আহ্বান জানান।

ড. ইউনূস বলেন, "জুলাই সনদ সই হয়ে গেলেই শেষ হয়ে যাবে না। এটা মস্ত বড় একটা অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু আরও বহু অধ্যায়ের সূত্রপাত শুরু করবে। কাজেই সেইভাবে আমরা আগাবো, যেন এটা কোথাও হারিয়ে না যায়। পাঠ্যবইসহ নানা জায়গায় এটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে।"

বৈঠকে বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদসহ তিন সদস্যের দল, নাগরিক ঐক্যর মাহমুদুর রহমান মান্না, এনসিপির আখতার হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, এবি পার্টির মুজিবুর রহমান মঞ্জু, এলডিপির কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, ইসলামী আন্দোলনের আশরাফ আলী আকন্দ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হকসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।