বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ভোটদানের সুযোগ দিতে ৪০০ কোটি টাকার বিশাল ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয়ের মাধ্যমে কতজন প্রবাসী ভোটদানে আগ্রহী হবেন, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথা বিবেচনা করে এই উদ্যোগকে 'গুরুত্বপূর্ণ' বলছেন তারা।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান ও ডাকযোগে ভোট গ্রহণের জন্য জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছে। বিদেশে ব্যালট পেপার পাঠানো এবং ফেরত আনাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরে এনআইডি সেবা দিতে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মিশনে যন্ত্রপাতি স্থাপন, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও যাতায়াতের খরচও রয়েছে।
বর্তমানে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকলেও এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়নি।
ডাক বিভাগ জানিয়েছে, ইএমএস/রেজিস্টার্ড সার্ভিসের মাধ্যমে একজন ভোটারের ব্যালট পেপার পাঠানো ও ফিরিয়ে আনতে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হতে পারে। এই ব্যয় নির্ভর করবে কতজন প্রবাসী ভোট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তার ওপর।
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সংশয়
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, “পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ দেশেই ভোটার উপস্থিতি খুবই কম দেখা যায়।” তিনি জানান, হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া প্রবাসী ভোটিংয়ে গড় ভোটার উপস্থিতি ৩% এর বেশি হয় না, এমনকি ভারতেও এই হার ৩% এর বেশি নয়। এত বিপুল অর্থ ব্যয় করে মাত্র ৩-৫% ভোটার যদি ভোট দেন, তাহলে এই উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
ইসির তৎপরতা ও কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের জন্য ইসি বর্তমানে কয়েকটি দেশে কাজ শুরু করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা বিভিন্ন দেশে এনআইডি সেবা ও ভোটার ব্যবস্থার উদ্বোধন করতে নিয়মিত সফর করছেন। এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে প্রায় অর্ধ লাখ আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার প্রবাসী ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, কর্মকর্তাদের এই বিদেশ সফরকে 'ভ্রমণ বিলাস' হিসেবে দেখার সুযোগ নেই, কারণ প্রবাসী ভোটিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য এটি জরুরি। এই সফরগুলোর ব্যয় আইডিইএ প্রকল্প (পর্ব-২) থেকে বহন করা হচ্ছে। সচেতনতা তৈরি ও ভোটদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রবাসীদের অবহিত করার জন্য এই সফরগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন অ্যাপ ও ভোট প্রক্রিয়া
পোস্টাল ব্যালটের জন্য 'পোস্টাল ব্যালট বিডি' নামে একটি নতুন অ্যাপ তৈরির কাজ চলছে। আগ্রহী প্রবাসীরা এই অ্যাপে নিবন্ধন করে ভোটদানের আগ্রহ প্রকাশ করতে পারবেন। এরপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসনভিত্তিক ব্যালট পেপার তাদের কাছে পাঠানো হবে। এই পুরো প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে ডাক বিভাগ থাকলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে নির্বাচন কমিশনের একটি কমিটির হাতে।
এছাড়াও প্রবাসীদের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে (আইসিপিভি) সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং জেলে বা আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের জন্যও পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধান রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh