× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সরকারি ভর্তুকির টাকা দিয়ে 'কৃত্রিম মুনাফা' ভাগাভাগি!

লোকসানি বিদ্যুৎ খাত, তবু লাভবান কর্মকর্তারা

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১:২৬ এএম । আপডেটঃ ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৬:০৮ পিএম

বিদ্যুৎ প্রতীকী ছবি

একদিকে বিদ্যুতের উৎপাদন খাতে প্রতিবছর সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে, যা গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৬২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, অন্যদিকে সেই ভর্তুকির টাকায় 'কৃত্রিম মুনাফা' করছে সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানি মুনাফার এই টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে 'প্রফিট বোনাস' হিসেবে ভাগ করে দিচ্ছে, যা 'লুণ্ঠন' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। সরকারের পক্ষ থেকে এই মুনাফা ভাগাভাগি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও কয়েকটি কোম্পানি তা উপেক্ষা করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মুনাফা বিতরণ করেছে।

ভর্তুকি নির্ভর মুনাফা

বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর এই মুনাফা কোনো দক্ষতা বা উৎপাদন সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে না। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) পরিশোধ করে, কেন্দ্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করুক বা না করুক। ফলে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও কোম্পানিগুলো মুনাফা করতে পারে।

পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনে ১১ টাকার বেশি দামে, অথচ বিতরণ সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করে ৭ টাকা ৪ পয়সায়। এই ঘাটতি পূরণে সরকারকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি ভর্তুকি বাদ দিলে এই কোম্পানিগুলো কখনোই লাভজনক থাকে না। তাই ভর্তুকির টাকা সমন্বয় না করে লাভ হিসাব করা বাস্তবতাবিরোধী।

নির্দেশনা সত্ত্বেও মুনাফা বিতরণ

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সরকারি কোম্পানিগুলোকে মুনাফা ভাগাভাগি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগ ২৪ সেপ্টেম্বর সব কোম্পানিকে একটি চিঠি পাঠায়।

তবে, মার্চ মাসের শেষ দিকে ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মুনাফা বিতরণ করে। এরপর ধাপে ধাপে মে মাসের মধ্যে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল), নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (নওপাজেকো), রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) এবং বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড (বিআরপিএল) একই কাজ করে। কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রম আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকায় তারা বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে মৌখিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে এই মুনাফা বিতরণ করেছেন।

২০১৭-১৮ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত নওপাজেকো ২১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মুনাফা বিতরণ তহবিলে জমা করেছে। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই প্রায় ৩৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। একই অর্থবছরে ইজিসিবি দিয়েছে ১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, এপিএসসিএল ২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা, আরপিসিএল ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং বিআরপিএল ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।

'মুনাফার নামে লুণ্ঠন'

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম এই মুনাফা ভাগাভাগিকে 'মুনাফার নামে লুণ্ঠন' বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'তাঁরা (কোম্পানির কর্মচারী) কেউ শ্রমিক নন, তাঁরা সরকারি কর্মচারী। অথচ শ্রম আইনের দোহাই দিয়ে তাঁরা মুনাফার ভাগ নেন। এটা মগের মুল্লুক।' তিনি আরও প্রশ্ন করেন, কোম্পানি যদি মুনাফার ভাগ নেয়, তবে লোকসানের দায়ও তাদের নেওয়া উচিত, তাহলে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে কেন?

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব আগেই চূড়ান্ত করা ছিল, তাই এই মুনাফা বিতরণ করা হয়েছে। তবে এরপর থেকে মুনাফা ভাগাভাগি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে।

যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানির চাপ

সরকারি ও বেসরকারি যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর অবস্থাও একই। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মুনাফা বিতরণ করা হলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ আছে। তবে কর্মচারীরা মুনাফার ভাগ বিতরণের জন্য চাপ দিচ্ছেন। অন্যদিকে, এই কেন্দ্রের চীনা অংশীদার চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত মুনাফা বিতরণে আপত্তি জানিয়েছে।

একইভাবে, বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানিও মুনাফা বিতরণের বিষয়ে অংশীদারদের মতামত চেয়েছে। এক্ষেত্রে পিডিবি সরকারের নির্দেশনা মেনে মুনাফা বিতরণ বন্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.