মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বক্তব্য রাখেন। ছবি: বাসস
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদেরকে তিনটি শ্রেণিতে (ক্যাটাগরি) ভাগ করে সরকারি সুবিধা দেওয়া হবে। প্রথম ক্যাটাগরিতে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের এককালীন ৫ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে এক অঙ্গহানি হয়েছে এমন অবস্থায় যাঁরা আছেন, তাঁদের এককালীন ৩ লাখ টাকা এবং মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। আর তৃতীয় ক্যাটাগরিতে সামান্য আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, ভালো হয়ে গেছেন—তাঁরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে চাকরি ও পুনর্বাসনে অগ্রাধিকার পাবেন। তাঁরা ভাতা পাবেন না।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম আজ সোমবার আহত ব্যক্তিদের সুযোগ–সুবিধা প্রদান নিয়ে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আজ এক কর্ম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতিটি পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল। কীভাবে সেই টাকা দেওয়া হবে, তা জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে প্রতিটি শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করে দেওয়া হবে। বাকি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ের মধ্যে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই ৩০ লাখ টাকা শুধু শহীদ পরিবারের জন্য।
উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে খ্যাত হবেন। এই নিরিখে তাঁরা সনদ পাবেন, পরিচয়পত্র পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁরা জুলাই যোদ্ধা নামে অভিহিত হবেন। তাঁরা এই নিরিখে পরিচয়পত্র পাবেন, সরকারি সুবিধা পাবেন। তাঁরা আজীবন এই সুবিধা পাবেন। ভাতাও পাবেন।
জুলাই অধিদপ্তরের কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হতে পারে—এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, জুলাই অধিদপ্তরের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। এ সপ্তাহের মধ্যে বা শিগগিরই অধিদপ্তর আত্মপ্রকাশ করবে। একটা নীতিমালা হয়েছে। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সরকারিভাবে অধিদপ্তর করছে। আগামী নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তাঁরা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা নিয়েই আসবেন। আশা করছি, তাঁরা এই ধারা অব্যাহত রাখবেন।’
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক–ই–আজম বলেন, অনেক ডিসি অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় অমুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। তাদের বিষয়ে জেলায় জেলায় মুক্তিযোদ্ধারা সোচ্চার হচ্ছেন। তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে ডিসিরা অনুরোধ করেছেন। ডিসিরা আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চেয়েছে। আমরা ডিসিদের বলেছি, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) পুনর্গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সে অনুযায়ী জেলায় জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই–বাছাই করা হবে। সেখান থেকে অমুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করা হবে। পরবর্তী সময়ে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
টিন, কম্বল এখন থেকে স্থানীয়ভাবে কেনা হবে
ফারুক–ই–আজম মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রমের উপকরণ এখন থেকে স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করা হবে। আগে কেন্দ্রীয়ভাবে কেনাকাটা হতো। দ্রুততার সঙ্গে সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছানো, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসিদের তত্ত্বাবধানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসব মালামাল কিনবেন। প্রতি উপজেলায় এ খাতে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বিগত সময়ে টিন, কম্বলসহ অন্যান্য উপকরণ কেন্দ্রীয়ভাবে কেনাকাটা করে তা মাঠ প্রশাসনে পাঠানো হতো। বরাদ্দপত্র দিতে আগে কেন্দ্রীয় প্রথা ছিল। এবার তা পরিবর্তন করা হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কম্বল আগে কেন্দ্রীয়ভাবে বিতরণ করা হতো। এবার মাঠ থেকে সংগ্রহ করে মাঠে দেওয়া হয়েছে। গৃহনির্মাণে টিন স্থানীয়ভাবে চাহিদার নিরিখে দেওয়া হবে। কোনোটাই কেন্দ্রীয়ভাবে রাখা হয়নি। ডিসিরা যাতে যথাযথভাবে স্পেসিফিকেশনের মাধ্যমে কিনে তা বিতরণ করেন, সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গৃহহীনদের গৃহনির্মাণে যাতে কোনো বৈষম্য সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে ডিসিদের বলা হয়েছে।
ডিসিরা টিন কি সরাসরি কিনবেন নাকি দরপত্র ডাকা হবে—এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ইউএনওরা সরাসরি কিনতে পারবে। আগের পদ্ধতিতে কী সমস্যা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে উপকরণ কেনার সময় দেখা যায়, একই জায়গা থেকে উপকরণ কেনাকাটা করা হচ্ছে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য কেনাকাটায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এমনকি যারা টিন উৎপাদন করত, তারাও অংশগ্রহণ করতে পারত না। এখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সরাসরি উপকরণ কিনে সরবরাহ করবে।
উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বলেন, ইউএনও সরাসরি কিনবে পিপিআর অনুসরণ করে। কেন্দ্রীয়ভাবে কিনতে গেলে জেলা পর্যায়ে পাঠাতে অতিরিক্ত খরচ হতো। এখন টাকা সাশ্রয় হবে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় পুনর্বাসন কার্যক্রম টিআর, কাবিখা, কাবিটায় যা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো যাতে যথাযথভাবে হয়, তা পর্যবেক্ষণেও ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh