কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল কাজী
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল কাজী মারা গেছেন।
রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন এ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান।
তার বয়স হযেছিল ৫৯ বছর।
ডা. শাওন বলেন, “তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। তবে রোববার বিকালে তার ইজিসি ফ্ল্যাট আসছিল, পালস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বেলা সাড়ে ৫টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।”
রোববার সন্ধ্যায় ফোন ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবুল কাজীর বড় বোন খিলখিল কাজী। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, "আমার ভাইটা অনেক কষ্ট পেয়ে চলে গেল। আমার ভাইটার জন্য দোয়া করবেন।"
রোববার রাতে বাবুল কাজীর মরদেহ গুলশানের আজাদ মসজিদে গোসল করানো হবে। এরপর ফ্রিজিং গাড়িতে মরদেহ থাকবে।
সোমবার বাদ জোহর বনানী সোসাইটি মসজিদে জানাজার পর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে দাফন করা হবে বলে জানান খিলখিল কাজী।
রাজধানীর বনানীর বাসায় শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে লাইটার বিস্ফোরণে গুরুতর দগ্ধ হন জাতীয় কবির ছেলে কাজী সব্যসাচীর ছোট সন্তান বাবুল কাজী। সকাল পৌনে ৭টায় আশঙ্কজনক অবস্থায় তাকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনার পর আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল বাবুল কাজীকে।
শনিবার হাসপাতালে ভর্তির পরপরই চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তার শরীরের ৭৪ শতাংশ পুড়ে গেছে, শ্বাসনালীও পুড়েছে।
আবৃত্তিকার কাজী সব্যসাচী ও উমা কাজীর তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট বাবুল কাজী। বাবুল কাজীর বড় দুই বোন খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী; তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।
ছোট ভাই বাবুল কাজীর দগ্ধ হওয়ার ঘটনার বর্ণনায় শনিবার নজরুল সংগীত শিল্পী খিলখিল কাজী বলেন, "ভোরবেলায় বাথরুমে ঢুকে ধূমপান করার জন্য লাইটার জ্বালিয়েছিলেন। এখন তো শীতের কারণে আমরা সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করেই রাখি।
“বাথরুমের ভেতরে আবদ্ধ হওয়ার কারণে সেখানে গ্যাস লাইটার জ্বালানোর পরই বিস্ফোরণ হয়।”
দুর্ঘটনার পরপরই তাকে হাসপাতালের আনার কথা শনিবার বলেছিলেন খিলখিল কাজী।
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তির পর বাবুল কাজীর চিকিৎসায় ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক মারুফুল ইসলামকে প্রধান করে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তবে তাদের সব চেষ্টা বৃথা করে রোববার বিকালে চলে গেলেন বাবুল কাজী।
স্বাধীনতার পরপর কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে দেশে আনার সময় পরিবারের সঙ্গে আসেন বাবুল কাজী। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
১৮৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া কাজী নজরুল ইসলাম ২৫ বছর বয়সে কলকাতায় প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন।
তাদের ঘরে চার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়, যাদের মধ্যে প্রথম সন্তান কৃষ্ণ মোহাম্মদ মারা যায় খুব ছোট বয়সে। দ্বিতীয় সন্তান অরিন্দম খালেদ বুলবুলের মৃত্যু হয় মাত্র চার বছর বয়সে। অপর দুই সন্তানের মধ্যে কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ কেউই দীর্ঘায়ু পাননি।
আবৃত্তিকার কাজী সব্যসাচী ও উমা কাজীর ছেলে তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট বাবুল কাজী। তার বড় দুই বোন খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী।
জাতীয় কবির আরেক ছেলে কাজী অনিরুদ্ধের পরিবারের বসবাস কলকাতায়। তার স্ত্রী কল্যাণী কাজী লেখক ও সংগীতশিল্পী।
তাদের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে কাজী অনির্বাণ সুইজারল্যান্ডে ঘুরতে গিয়ে গত ২ অক্টোবর মারা যান। অনির্বাণের ভাই কাজী অরিন্দম (সুবর্ণ) থাকেন কলকাতায়, আর তাদের বোন অনিন্দিতা কাজী নিউ জার্সি প্রবাসী।
তাদের বাবা অনিরুদ্ধ ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কাজী নজরুল জীবিত থাকতেই মারা যান।
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh