পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।ফাইল ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। আজ সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তিনি বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তাব, কেন্দ্র রাষ্ট্রপুঞ্জের (জাতিসংঘ) কাছে বাংলাদেশে শান্তি সেনা পাঠানোর আরজি জানাক।’ এ বিষয়ে একটি লিখিত প্রস্তাবও তিনি কেন্দ্র সরকারকে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন শুরু করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। গত ২৮ নভেম্বর সিপিআইএমের পলিটব্যুরো বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ শান্তি সেনা পাঠানোর প্রস্তাব করলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে বলেছেন, কার্যত বাধ্য হয়েই এই মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীকে করতে হলো। কারণ, বিরোধীরা এটিকে পশ্চিমবঙ্গে ইস্যু করে ফেলছে।
বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্র সরকারের বক্তব্য চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাজ্য সরকারের নেই। তাই তাঁরা কেন্দ্র সরকারের পরামর্শ মেনে চলবেন। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অথবা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিও ভারতের সংসদে দাবি করেন মমতা।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে দেখছি, কেন্দ্রীয় সরকার চুপ করে আছে। তাঁর দল (বিজেপি) রোজ মিছিল করছে। সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। বলছে যে খাবার দেবে না। এটা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলুন। দুই দেশ কথা বলুক। কিছুই না হলে কেন্দ্র ভারতীয়দের ফেরাক। আমরা খাবার জোগাতে পারব।’
সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের যে অভিযোগ উঠছে সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। আমাদের বিষয় নয়। তবে এ–ও ঠিক যে আমাদের অনেক বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন বাংলাদেশে রয়েছেন। যেকোনো ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষই আক্রান্ত হন না কেন, আমরা এর নিন্দা করি। আমরা চাই, শান্তি নিশ্চিত করা হোক। এই সভা থেকে প্রস্তাব নেওয়া হোক যে আমাদের বন্ধুদের ওপর যেন অত্যাচার না হয়।’
বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকাকে অসম্মান করার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় পতাকার অমর্যাদা ঠিক হচ্ছে না। ইসকনের সঙ্গেও কথা বলেছি।’ পশ্চিমবঙ্গের ৭৯ জন মৎস্যজীবী বাংলাদেশের কারাগারে বন্দী থাকার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তাঁদের আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজকের মন্তব্যের প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা একটা বড় কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই রকম মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গের কোনো মুখ্যমন্ত্রী করেছেন বলে মনে হয় না। বস্তুত অন্য কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও স্মরণকালের মধ্যে করেছেন বলে আমার মনে পড়ছে না।’
বাংলাদেশের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কী ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছেন, তা এর থেকে প্রতীয়মান হয় বলে উল্লেখ করেন ওই তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, ‘বিরোধীরা বিষয়টিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে, বাংলাদেশকে লাগাতার একটি ইস্যুতে পরিণত করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। এখন মুখ্যমন্ত্রীকে সব দিক দেখতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে মাথায় রাখতে হয় যে এর ফলে যাতে পশ্চিমবঙ্গে ভোটের বিভাজন না হয়। সেটা মাথায় রেখেই তিনি এই মন্তব্য করেছেন বলে আমি মনে করছি। আমার মতে ঠিকই করেছেন।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh