প্রতি কর্মদিবসেই কোনো না কোনো দাবি নিয়ে সচিবালয়ের ফটকের সামনে এমন বিক্ষোভ হচ্ছে। কর্মীদের ভেতরে প্রবেশ ও বের হতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে | ছবি—সংগৃহীত
সরকার পতনের পর থেকেই ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছে সচিবালয়কেন্দ্রিক মিছিল, বিক্ষোভ ও অবরোধ। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র খ্যাত এই কেপিআই অবকাঠামোর ভেতরে সরকারি কর্মচারীরাও নিয়মিত বিক্ষোভ করছেন।
পুলিশের দুর্বল প্রতিরোধ অতিক্রম করে একজোট হয়ে মানুষ ভেতরে ঢুকে যাচ্ছেন, মিছিল করছেন, কর্মীদের বের হতেও বাধা দিচ্ছেন।
জনতার অবস্থানের কারণে উপদেষ্টা, সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে ঢুকতে বেগ পেতে হচ্ছিল এ সময় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন- আইএফসির একজন কর্মকর্তাকে বহনকারী একটি গাড়ির চালক বলেন, “বাইরে বিক্ষোভ সচিবালয় থেকে বের হতে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা বসে আছি।”
গত ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর প্রথম কর্মদিবস ১১ অগাস্ট থেকেই প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা পদোন্নতি, বদলি ঠেকানো, চাকরি স্থায়ীকরণ ইত্যাদি দাবি নিয়ে নিয়মিত মিছিল করে যাচ্ছেন।
বুধবার সকাল থেকে সচিবালয়ের পশ্চিম পাশের ফটকে নার্স ও মিডওয়াইফরা অবস্থান নেয়। বদলির হয়রানি দূর করা এবং বদলির ক্ষমতা মন্ত্রণালয় থেকে নার্সিং অধিদপ্তরে ফেরত নেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন তারা।
আন্দোলনকারীদের একজন লিটন হাসান বলেন, “আমাদের নিয়োগের সময় বলা হয়েছে, চাকরিতে যোগ দেওয়ার দুই বছর পর বদলির আবেদনপত্র নার্সিং অধিদপ্তরে জমা দেওয়া যায়। কিন্তু চাকরিতে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর এই ক্ষমতা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে এখন আমরা আর ৫/৬ বছরেও বদলির সুযোগ পাচ্ছি না।
“আমাদের প্রচুর ভোগান্তি হচ্ছে, বদলির জন্য টাকা দাবি করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোর পরিচালক ও উপপরিচালকরা ফরোয়ার্ডিংয়ের জন্য টাকা দাবি করে, মেয়েদেরকে ফরোয়ার্ডিং বাবদ যৌন হয়রানির সুযোগ চাচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেলের একজন উপপরিচালক ২০২৩ সালে একজন নার্সকে যৌন হয়রানি পর্যন্ত করেছে।”
বাউফল পটুয়াখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফ শারমিন আক্তার বলেন, “আমার শ্বশুরবাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জে। আমি আজকে ছয় বছর ধরে নিজ এলাকায় বা বরিশাল সদরে বদলি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। এই অবস্থায় চাকরি চালিয়ে নেওয়া আমার জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। আবার এতদিন পড়াশোনা করে নেওয়া এই চাকরি ছাড়তেও পারছি না।”
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই কেন এভাবে আন্দোলনে নামলেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা শুনেছি যত রকম বৈষম্য দূর করার, তা এই ৯০ দিনের মধ্যেই করা হবে। তাই আমরা তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছে। আওয়াজ না দিলে তো দাবি পূরণ হবে না। আমরা তো কষ্টে আছি।”
প্রতিবন্ধীদের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের অনুমোদন দেওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষক সচিবালয়ের এক নং ফটকে অবস্থান নেন এমপিওভুক্তির দাবিতে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থেকে আসা মোখলেছুর রহমান বলেন, “প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সারাদেশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১ হাজার ৭৭২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে আমাদের জন্য একটা বিশেষ নীতিমালা করা হয়েছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী আমরা স্কুল প্রতিষ্ঠা করি। মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি স্কুলের পরিদর্শন কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এগুলোর এমপিও হয়নি, আমরা কোনো বেতন পাইনি। তারা আমাদের সঙ্গে প্রহসন শুরু করেছে।”
নির্বাচিত সরকারের পতন হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সময়ে প্রশাসন স্থবির। এ রকম একটা সময়ে কেন দাবি পূরণের জন্য সচিবালয় অচল করে দেওয়া?- এই প্রশ্নে মোখলেছ বলেন, “দেশের বৈষম্য যেহেতু দূর হইতেছে, তাহলে এই সুযোগে আমাদের বৈষম্যটুকুও দূর হয়ে যাক।”
মঙ্গলবার দুপুরেও কয়েক হাজার কলেজ পড়ুয়া মিছিল নিয়ে ঢুকে পড়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানান। সন্ধ্যায় ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার পরীক্ষা বাতিলের লিখিত ঘোষণা দিলেও তারা আরও ঘণ্টাখানেক সময় সচিবালয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকেন। বিকাল ৫টা পর্যন্ত তারা ফটকগুলোতে অবস্থান নেয় যাতে কেউ বের হতে না পারে।
আন্দোলনকারী ছাত্রদের সচিবালয়ে প্রবেশের ঘটনাকে অনভিপ্রেত বলেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।
“আসলে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, এই মুহূর্তে আমরা কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না। দেখি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কী নির্দেশ দেয়”, বলছিলেন ৩৬তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা।
এদিন বিকালের অংশে তিনি সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
বিষয় : পুলিশ অন্তর্বর্তী সরকার দাবি আদায় সচিবালয়
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh