ছবি | সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে এক দফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত ও প্রাণহানির খবর আসছে।
বেলা ১১টার পর রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, উত্তরা, রামপুরা, ধানমন্ডি, জনসন রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ শুরু করে।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুরান ঢাকায় পোড়ানো হয় পুলিশের গাড়ি।
উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে।
মুন্সীগঞ্জে সংঘর্ষের মধ্যে অন্তত দুজনের মৃত্যুর খবর এসেছে।
মাগুরায় সংঘর্ষের পর এক ছাত্রদল নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ নেয়া হয়েছে হাসপাতালে।
আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
[আমাদের প্রতিবেদকদের পাঠানো সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে]
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আুগন
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার সময় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় ক্যাম্পাসে। এসময় সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ কিছু মিছিল এসে জড়ো হয়। পরে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী সেখান থেকে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলে তাদের হাতে লাঠিসোঁটা দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে শহরের ভাঙা রাস্তার মোড় হয়ে মুজিব সড়ক দিয়ে লাভলু সড়কে গিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা করে।
আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা তাদের পিটিয়ে-আহত করে সরিয়ে দেয়। পরে কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। পুড়িয়ে দেয়া হয় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল।
পরে বিক্ষোভকারীরা মুজিব সড়কে দিয়ে ব্রহ্মসড়ক দিয়ে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র সংসদ রুকসু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে জেলখানার পেছনের সড়কে অবস্থান নেয়। এসময় তারা চকবাজারে যুবলীগের কার্যালয়েও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। আন্দোলনকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে অগাস্ট মাস উপলক্ষে নির্মিত তোরণ, বিল বোর্ড ও ব্যানার ভাঙচুর করে।
গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, এর কিছুক্ষণ পর কোটচত্ত্বর এলাকায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের বাধা পেয়ে তারা শহরের জনতা ব্যাংক মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়।
সচিবালয়ে মন্ত্রীদের উপস্থিতি কম, বাইরে উত্তেজনা
সোমবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে জনপ্রশাসনমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, শ্রম প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজন মন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে তারা আসেননি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গণভবনে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক (এনএসসি) কমিটির জরুরি মিটিংয়ে বসেছেন বিদুৎ প্রতিমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। সেকারণে সচিবালয়ে মন্ত্রীদের উপস্থিতি কম।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীকে তাদের নিজ নিজ দপ্তরে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, "আমি রুটিন কাজ করতে এসেছি। আমাদের কাজ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া। আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল নির্বিশেষে সবাইকে সেবা দিচ্ছি।"
সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার পর থেকে নিরাপত্তার জন্য সচিবালয়ের সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই সময়ে বাইরে গুলি, হাতবোমা বিস্ফোরণ ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। তাতে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ, সঙ্গে ফেইসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা না পেয়ে আবারো বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।
সেই সঙ্গে ফেইসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটেও সামাজিক যোগাযোগের এ দুটো মাধ্যমে ঢুকতে পারছেন না ব্যবহারকারীরা।
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা নিশাত সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, “সকাল থেকে মোবাইল ডেটা দিয়েই সব কিছু চলছিল। বেলা ১টার পর আর চলছে না, মেসেজ পাঠাতে গেলাম, দেখি যাচ্ছে না। বারবার মোবাইল ডেটা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে কেন? অনেক জরুরি কাজও তো আমাদের করতে হয়।”
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিটিআরসি সচিব নুরে আলম খাজা বলেন, “মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের এমন কোন নির্দেশনা আমরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাইনি। এ বিষয়ে কিছুই জানি না।”
আর আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “বন্ধের জন্য আমাদের পর্যন্ত নির্দেশনা আসতে হয় না। আমাদের উপরে আরো দুটি লেয়ার রয়েছে, বন্ধ করার হলে তারাই বন্ধ করে দেন। আমরা তো শুধুমাত্র প্রোভাইডার। তবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।”
চট্টগ্রামে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ-আহত ৩০ জন হাসাপাতালে
চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ৩০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
আহতের মধ্যে ১২-১৩ জন ছররা গুলিতে আহত বলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন জানান।
গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অসহযোগ আন্দোলনে ডাক দেয়া আন্দোলনকারীরা নগরীর নিউ মার্কেট মোড় এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এ সময় তারা আশেপাশের রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে।
সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও ছোড়ে।
পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে আন্দোলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
মাগুরা হাসপাতালে ছাত্রদল নেতার লাশ
রোববার বেলা ১১টার দিকে শহরের ঢাকা রোডে পুলিশ ও বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষের পর এক ছাত্রদল নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ নেয়া হয়েছে হাসপাতালে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে সাংবাদিকরা জানান, সকালে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, পুলিশও তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে।
এ সময় জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম।
তিনি বলেন, “পুলিশের গুলিতে রাব্বি নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে।”
মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মী আজিজুর রহমান বলেন, বেলা ১২টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অমর প্রসাদ বিশ্বাস জানান, তিন পুলিশ সদস্যসহ আহত ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে ছাড়ছে না দূরপাল্লার বাস
অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের মধ্যে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়ছে না।
বাস চালক ও কাউন্টারের কর্মীরা জানিয়েছেন ‘নাশকতার শঙ্কায়’ ঢাকা থেকে বাইরের জেলার উদ্দেশে কোনো বাস টার্মিনাল থেকে তারা বের করছেন না।
গণমাধ্যম কর্মীরা রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী এবং সায়েদাবাদ টার্মিনাল ঘুরে দেখেছেন, দূরপাল্লার বাসগুলো দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধভাবে।
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, “দূরপাল্লার বাস ছাড়ার পরিবেশ নাই। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ আছে।”
মহাখালী থেকে সিলেট, ময়মনসিংহগামী এনা ট্রান্সপোর্টের বুকিং সহকারী ইমন ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কোনো বাস ছাড়ছে না। কিছু হলেই তো বাসে আগুন দেয়। তাই আমাদের গাড়ি ছাড়ছে না।”
এই টার্মিনাল থেকেই নওগাঁগামী একতা পরিবহনের চালকের সহকারী রাসেল হোসেন বলেন, “আমাদের বাস চলাচল বন্ধ। আগুন লাগলে তো সব গেল। এখন না চললেও আবার লস। কিছুই করার নাই। আমাদের কষ্ট কে বুঝবে?”
হানিফ পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের বুকিং সহকারী জিহাদুল ইসলাম বলেন, “মূলত নাশকতার শঙ্কা থেকেই বাস বন্ধ হয়েছে।”
সেনাবাহিনীর এপিসি ঘিরে বিক্ষোভ
ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের সামনের মহাসড়কে সেনাবাহিনীর এপিসি বা আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকরা জানান, এসময় সেনা সদস্যরা ট্যাংকের উপর দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। তারা সেখানকার পরিস্থিতি ক্যামেরায় ধারণ করেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘এই মুহূর্তে দরকার, সেনাবাহিনীর সরকার’ স্লোগান দিতে থাকেন।
মুন্সীগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ২
মুন্সীগঞ্জ শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে দুইজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
রোববার শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় এই সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুইজনকে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা করে তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
গণমাধ্যম কর্মীরা আরো জানান, নিহতদের দুইজনই পুরুষ। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
বিক্ষোভে গুলি না চালানোর রিট খারিজ
আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ সিদ্ধান্ত দেয়।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে গণমাধ্যম কর্মী দেবাশীষ দেব জানান, আদালত আদেশে বলেছে, সব নাগরিকের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণের অধিকার আছে। পুলিশকেও আইনের নির্দেশনা মানতে হবে।
আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানো এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়কারীর ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তির নির্দেশনা চেয়ে এ রিট আবেদন করেন আইনজীবী মানজুর আল মতিন প্রীতম ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি।
আহত ২০ জন ঢাকা মেডিকেলে
অসহযোগ আন্দোলনে সহিংসতার মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আহত ২০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা নিতে এসেছেন অন্তত দুইজন। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, রোববার দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ, শনির আখড়া, নয়াবাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। আহতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের রেকর্ড দেখে গণমাধ্যম কর্মী আমিনুল ইসলাম জানান, শনিরআখড়া থেকে জামাল উদ্দিন (৫০) ও সাব্বিরকে (১৮) নেয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া, মুন্সীগঞ্জ থেকে দীপ (২০) ও মঞ্জিল (৫০), ঢাকার শাহবাগ থেকে মাহিন (২৫), হাসিবুর রহমান (৩০) সুবাস (২৪), তানভীর রহমান (২০), সেলিম (৪০), রিমন (২৩), হৃদয় (২০), গুলিস্থান থেকে শাহজালালসহ (৩০) ১৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ
রোববার সকাল থেকেই এ মহাসড়কে যান চলাচল কম ছিল৷ পরে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের সাইনবোর্ড, মৌচাক, শিমরাইলসহ কয়েকটি অংশে অবস্থান নিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে শুরু করে৷ এছাড়া ঢাকার শনির আখড়া, মাতুয়াইলেও তারা অবরোধ করে।
আমাদের নারায়ণগঞ্জ থেকে গণমাধ্যম কর্মী সৌরভ হোসেন সিয়াম জানান, সকালে ছোট যানবাহন চলাচল করলেও বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সড়কটি আন্দোলনকারীদের দখলে চলে গেলে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে জানায় হাইওয়ে পুলিশ৷
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ এ কে এম শরফুদ্দিন বলেন, “সকাল থেকেই এ মহাসড়কে যান চলাচল কম ছিল৷ দূরপাল্লার বাস চলাচল ছিল না বললেই চলে৷ পণ্যবাহী যান চলাচলও ছিল একেবারে নগণ্য৷ বেলা বাড়ার পর আন্দোলনকারীরা মহাসড়কটি বন্ধ করে দিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।”
সরেজমিনে মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, মৌচাক শিমরাইল মোড়ে ও ঢাকার যাত্রাবাড়ী শনির আখড়া এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবস্থান করতে দেখা যায়৷ তাদের কয়েকজনের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল৷ তারা তাদের সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন৷ তবে কোনো যানবাহন ভাঙচুর করতে দেখা যায়নি৷
উত্তরার সড়কে আন্দোলনকারীরা, যান চলাচল বন্ধ
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার বেলা ১১ টার দিকে উত্তরা সাত নম্বর সেক্টরের উত্তরা হাই স্কুলের সামনে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও মিছিল নিয়ে এসে সমবেত হন।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিবেদক প্রশান্ত মিত্র জানান, আন্দোলনকারীরা একসঙ্গে বিএনএস সেন্টারের সামনের সড়কে এসে অবস্থান নিলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকেও মিছিলের সঙ্গে যোগ দিতে দেখা যায়।
‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় প্রায় সবার হাতেই লাঠি, স্টিলের পাইপ, স্টাম্প দেখা যায়। সড়কে টায়ার ও কাঠ জ্বালানো হলে সেই ধোঁয়া দেখা যায় বহু দূর থেকে।
শিক্ষার্থীদের জমায়েত ঘিরে আশপাশে পুলিশের কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি। একরকম বিনা বাধায় আন্দোলনকারীরা উত্তরায় তাদের কর্মসূচি শুরু করেন।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে হামলা
রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে একদল শ্রমিক লাঠিসোঁটা হাতে শাহবাগে জড়ো হন।
ঘটনাস্থল থেকে গণমাধ্যম কর্মী রাসেল সরকার ও শাফাত রহমান জানান, এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনের দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এক পর্যায়ে ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএসএমএমইউর ভেতরে চলে যান। পরে আন্দোলনকারীরা বিএসএমএমইউর ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
তখন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও বাস। পাশাপাশি হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনে ঢিল ছুঁড়ে এবং লাঠি দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।
জনসন রোডে পুলিশের গাড়িতে আগুন
রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল ওই এলাকা দিয়ে যায়। এসময় তারা শেখ হাসিনার পতন চাই, ছাত্র হত্যার বিচার চাই বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
আদালত গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। একপর্যায়ে জনসন রোডে পুলিশের পিকআপ ভাঙচুর করে তাকে আগুন দেয়া হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য জানতে পারেনি সাংবাদিকদের।
শাহবাগে আন্দোলনকারীরা
রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ মোড় দখল করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে শাহবাগের চারপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকরা জানান, এসময় তারা ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘অভ্যুত্থান, অভ্যুত্থান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান,’ ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে,’ ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস,’ ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত,’ ‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে,’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাদের অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা দেখা গেছে।
কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগে বেলা ১১টা থেকে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ আয়োজনের কথা জানান আন্দোলনের সমন্বয়করা। এছাড়া সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, টেকনিক্যাল, মিরপুর ১০, রামপুরা, তেজগাঁও, ফার্মগেট, পান্থপথ, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ আয়োজনের কথা রয়েছে।
যাত্রাবাড়ীতে সতর্ক পুলিশ
যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, শনির আখাড়া, রায়েরবাজার মহাসড়কে মাঝে মধ্যে শুধু সরকারি অফিসগামী যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে সকাল বেলায়।
এই এলাকা ঘুরে সাংবাদিকরা জেনেছেন, গত শনিবার রাত থেকে বন্ধ হওয়া গুলিস্তান ফ্লাইওভার বেলা সাড়ে দশটা পর্যন্ত খোলেনি।
দুই পাশের সড়কে যানবাহন, গণ পরিবহন চলাচল ছিল সামান্য। কোনো বাস চলেনি সকাল থেকে। গণপরিবহন, প্রাইভেট কার, চলাচল না করায় সড়ক ফাঁকাই দেখা গেছে।
গণপরিবহন না পেয়ে অফিসগামীরা রিকশায় চলাচল করেছেন যৌথভাবে ভাড়া দিয়ে।
ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহন কম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার সকালে রাজধানীর সড়কে গণপরিবহন চলছে একেবারেই কম। এদিন সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হলেও রাজধানীর সড়কে কোনো যানজট দেখা যায়নি।
সায়েন্স ল্যাব, এলিফেন্ট রোড, ধানমন্ডি মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, বিজয়স্মরণি, মহাখালী, বনানী, খিলক্ষেত, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুরের সড়কজুড়ে গণ পরিবহন নেই বললেই চলে। এসব জায়গার সড়কে অল্প কিছু প্রাইভেট কার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে সেই সংখ্যা হাতে গোনা। এতে পথে বের হওয়া অফিসগামীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যাও সেভাবে দেখা যায়নি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থানে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh