জশ শ্যাপিরোর সঙ্গে কমলা হ্যারিস | ছবি —রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের দিন এগিয়ে এলেও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর সামনে এসেছে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম।
মনোনয়ন পাওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন তিনি। প্রয়োজনীয় ডেলিগেটের (দলীয় প্রতিনিধি) সমর্থন তিনি এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন।
শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে অগাস্টে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে।
কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পাবেন এটি একরকম স্পষ্ট। তাই হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলে তার রানিং মেট অর্থাৎ, ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে কাকে বেছে নেবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনেই রানিং মেটের নাম ঘোষণা হবে। ফলে কে হবেন এই রানিং মেট সে খোঁজও শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। এ তালিকায় আছে প্রায় ১০ জনের নাম।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- রয় কুপার, জশ শ্যাপিরো এবং মার্ক কেলি। তাদেরকে দল থেকে নিজ নিজ আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক ইতিহাস এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
আর অন্যান্য সম্ভাবনাময় প্রার্থীর মধ্যে আছেন, অ্যান্ডি বেশিয়ার, জে বি প্রিৎজকার, পিট বুটিগিয়েগ, গ্রেচেন হুইটমার ও গ্যাভিন নিউসম।
এইসব প্রার্থীর মধ্যে থেকেই কোনও একজনকে রানিং মেট হিসাবে বেছে নিতে পারেন হ্যারিস। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই প্রার্থী তালিকা:
জশ শ্যাপিরো
পেনসিলভেইনিয়া রাজ্যের গভর্নর জশ শ্যাপিরো ২০২২ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পান। ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল অস্বীকার করা কট্টর-ডানপন্থি সেনেটরকে হারিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যটির তৃতীয় ইহুদি গভর্নর হন তিনি।
৫১ বছর বয়সী শ্যাপিরো গভর্নর হওয়ার আগে রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল, কাউন্টি কমিশনার এবং রাজ্য প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবেও ডেমোক্র্যাটদের অনেকেই তাকে সমর্থন করেছিলেন।
কমলা হ্যারিস মনোনয়ন পেলে তার রানিং মেট হওয়ার অনেকটাই সম্ভাবনা আছে জশ শ্যাপিরোর। এর আগে তার সম্পর্কে হ্যারিসকে বলতে শোনা গেছে, “প্রেসিডেন্ট ও আমার দারুণ সহযোগী তিনি।”
রয় কুপার
নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর রয় কুপার ২০১৬ সাল ও ২০২০ সালে এই রাজ্যে জয়ী হন। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ রাজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত রোববার তিনি কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন। হ্যারিস প্রার্থী হলে রয় কুপার তার রানিং মেট হবেন, এমন গুঞ্জন চলে এসেছে অনেক দিন ধরেই।
মার্ক কেলি
অ্যারিজোনার সেনেটর মার্ক কেলি এমন এক রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যেখানে ২০২০ সালে বাইডেন মাত্র ১০, ৪৫৭ ভোটে জিতেছিলেন। তাছাড়া, কেলি সাবেক একজন নভোচারী হিসেবে পরিচিত এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্ভরযোগ্য সমর্থকও।
গত রোববার কেলি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মনোনয়নের পক্ষে হ্যারিসের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং আমি তাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করব।”
অ্যান্ডি বেশিয়ার
কমলা হ্যারিসের রানিং মেট হিসেবে আলোচনায় রয়েছে কেন্টাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেশিয়ারের নাম। কেন্টাকি রিপাবলিকানদের রাজ্য হিসেবে পরিচিত হলেও সেখানে ডেমোক্র্যাট হিসেবে গতবছর নভেম্বরের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন বেশিয়ার।
কমলা হ্যারিসকে তিনিও সমর্থন দিয়েছেন এবং হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলে রানিং মেট হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বেশিয়ার।
তিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গভর্নরদের একজন। করোনাভাইরাস মহামারীসহ ২০২১ সালের টর্নেডো এবং ২০২২ সালের বিপর্যয়কর বন্যার মতো সংকট মোকাবেলায় রাজ্যের নেতৃত্ব দিয়ে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন অ্যান্ডি বেশিয়ার।
জেবি প্রিৎজকার
ইলিনয় রাজ্যের গভর্নর জে বি প্রিৎজকার ২০২২ সালের পুনর্নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়ী হন। তিনি গত সোমবার সকালে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একজন নারীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
“হ্যারিস তার ক্যারিয়ারের প্রতিটি পর্যায়ে প্রমাণ করেছেন যে, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা, শক্তি, বৈশষ্ট্য এবং আমেরিকানদের জীবনকে আরও উন্নত করার দূরদৃষ্টি তার রয়েছে। তিনি ট্রাম্পকে পরাজিত করার জন্য আমাদের দলের সেরা হিসেবেই প্রতিনিধিত্ব করছেন।”
এ বছরের নির্বাচনে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ এবং গর্ভপাতের অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা বেশ কিছু বিষয় সামাল দিচ্ছেন প্রিৎজকার।
পিট বুটিগিয়েগ
যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন প্রশাসনের ৪২ বছর বয়সী পরিবহনমন্ত্রী পিট বুটিগিয়েগ ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় মনোনয়নের প্রচারে একজন মধ্যপন্থি হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। সে সময় মাঠ পর্যায়ে বেশ সমর্থনও পেয়েছিলেন তিনি।
বুটিগিয়েগ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রকাশ্যে একজন সমকামী হিসাবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান। তিনিই দেশটির এ যাবৎকালের সর্বকনিষ্ঠ পরিবহনমন্ত্রী। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
কমলা হ্যারিসকে তিনিও প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসাবে সমর্থন দিয়েছেন এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্পের রানিং মেট জে ডি ভ্যান্সের সঙ্গে কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সে বিষয়েও কথা বলেছেন।
গ্রেচেন হুইটমার
মিশিগান রাজ্যের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারকে অনেকেই বাইডেনের উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসাবে দেখেছিলেন। মিশিগান রাজ্যে হুইটমার পাকাপোক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।
২০২২ সালে পুনর্নির্বাচনে হুইটমার এ রাজ্যে ১০ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গভর্নর হওয়ার পর তার অবস্থান অনেকটাই সুসংহত হয়।
হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলে এবং হুইট্মার তার রানিং মেট হলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তা হবে এক দৃষ্টান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যাবে দুই নারীর নেতৃত্ব। সেটি হবে ঐতিহাসিক ঘটনা।
হুইটমার সোমবার এক্স-এ একটি পোস্টে হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে সমর্থন করে বলেছেন, তিনি কমলা হ্যারিসের প্রচারের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে তিনি ততটা আগ্রহী নন, এমনই আভাস পাওয়া গেছে তার কথা থেকে। স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেছেন, "আমি মিশিগান ছেড়ে যাচ্ছি না। মিশিগানের গভর্নর থাকতে পেরে আমি গর্বিত। আমি কোথাও যাচ্ছি না।”
গ্যাভিন নিউসম
ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এবছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, এমন আলোচনা চলে এসেছে গতবছর থেকেই।
তাছাড়া, গত ২৭ জুন প্রতিপক্ষ ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি নির্বাচনি বিতর্কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শোচনীয় হারের পরও বিকল্প ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসাবে নিউসমের নাম শোনা যাচ্ছিল।
গত রোববার কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন নিউসম। তিনি বলেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলার বিচার কমলা হ্যারিসের চেয়ে ভাল আর কেউ করতে পারবেন না। সেইসঙ্গে দেশকে একটি সুষ্ঠু দিক নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রেও হ্যারিসের চেয়ে ভাল আর কেউ হবেন না।
সূত্র: সিএনএন
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh