ছবি: সংগৃহীত
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হলেও থামছে না জের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারাই প্রার্থী হওয়ায় বিভেদের কাঁটায় বিদ্ধ হচ্ছে দলটির তৃণমূল। প্রতিদিনই পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা করছেন জয়ী প্রার্থীর নেতাকর্মীরা।
বরিশালের গৌরনদী, বরগুনার তালতলী, বাগেরহাটের মোংলা ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শতাধিক ব্যক্তি হামলা-পাল্টা হামলায় আহত হয়েছেন। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই অভিযোগ করেছেন, জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরাই হামলায় দায়ী।
তালতলী: সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তালতলী উপজেলা পরিষদের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার অভিযোগ করেছেন, জয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা নির্বাচনের পর থেকে তাঁর অন্তত ৪০ জন কর্মী-সমর্থককে মারধর করেছে। এ ছাড়া হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে শতাধিক সমর্থককে।
এ ছাড়া বাড়িতে হামলা, লাঞ্ছনার চিত্র তিনি তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে। তাঁর সমর্থক বড় আমখোলা গ্রামের রুহুল আমিন, পাওয়াপাড়া গ্রামের মো. ফারুক হাওলাদার, বড় অংকুজানপাড়ার হাসান হাওলাদার, ছোট বগীর সোহেল রানা, নলবুনিয়া গোরাপাড়ার লাভলী বেগম, দক্ষিণ-পূর্ব বেহেলা গ্রামের ফরিদা বেগম ও সামীম ফকির, সোনাকাটার মো. প্রিন্স, কবিরাজপাড়ার বশির আলম, মো. মনির মাস্টারসহ ৪০ জনকে মারধর করা হয়েছে বলেও জানান। এ ছাড়া শতাধিক কর্মীকে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।
এ সময় ভুক্তভোগীরা মারধরের শিকার ও লাঞ্ছনার বর্ণনা দেন। তারা প্রতিপক্ষের অত্যাচার ও হয়রানি থেকে বাঁচতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দার আরও বলেন, নির্বাচনের দিন অন্তত ১০টি ভোটকেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্ট বের করে দিয়ে জাল ভোট, প্রকাশ্যে ভোট দেওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন। তিনি ওই কেন্দ্রগুলোর নামও তুলে ধরেন।
নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মিন্টুর ভাষ্য, ‘নির্বাচনে একই পরিবারের লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন করেন। এ নিয়ে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব হয়ে থাকে। এসব ঘটনাকে অনেকে নির্বাচনী বিরোধে রূপ দেয়। আমার সব নেতাকর্মীকে শান্ত থাকতে বলেছি।’ তবে পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মঠবাড়িয়া: সোমবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলায় অন্তত ২৩ জনের আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আহত ব্যক্তিরা জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. বায়জিদ ও পরাজিত প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদের সমর্থক। তাদের সাতজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ও ছয়জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহত ব্যক্তিরা হলেনু দধিবাংগা গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা পল্লিচিকিৎসক হুমাউন কবির (৬৫), ফারুক খান (৬৬), ফুলঝুড়ি গ্রামের সাইফুল ইসলাম (২২), শাহ আলম (৬২), মহিউদ্দিন (৩৫), বাদুরা গ্রামের মিরাজ (২৫) ও আবদুল মালেক (৭০)। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, বরিশালে পাঠানো সাইফুল ও মহিউদ্দিনের অবস্থা সংকটজনক। মঠবাড়িয়া থানার পরিদর্শক আব্দুল হালিম তালুকদার বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা রোধে পুলিশের ১৩টি ভ্রাম্যমাণ দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লিখিত পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
মোংলা: চেয়ারম্যান পদের পরাজিত প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন অভিযোগ করেছেন, রোববারের নির্বাচনে ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে ফল ঘোষণার পর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তাঁর নেতাকর্মী ও সমর্থকের ওপর হামলা হয়েছে। তাঁর ভাষ্য, রোববার রাতেই বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্ধা আবাসন এলাকায় তাঁর কর্মী বাবুলকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া তাঁর দোকানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে চাঁদপাই ইউনিয়নের পাগলের মোড়ে তাঁর সমর্থক মোংলা পূজা উদযাপন কমিটির সাবেক সভাপতি পীযূষ কান্তি মজুমদারের ওপর হামলা হয়েছে। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন তিনি। এ জন্য তাহের সমর্থক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই হাবিবকে দায়ী করেন। এর পর চৌকিদারের মোড়ে ইকবালের কর্মী ইউছুফ ও সাইদুল; চিলা ব্রিজের গোডা খাল এলাকায় প্রভুদান হালদারকে পেটানো হয়েছে। এ ছাড়া পৌর এলাকাসহ নানা ইউনিয়ন থেকে কর্মীদের ওপর হামলার তথ্য পেয়েছেন।
এসব হামলার জন্য জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদারের নেতাকর্মীকে দায়ী করেন ইকবাল। তবে আবু তাহের হাওলাদার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি উল্টো দাবি করেন, ফল ঘোষণার পর মিঠাখালী ইউনিয়নে পরাজিত প্রার্থী ইব্রাহিম হাওলাদারের ক্যাডার বাহিনীর হামলায় তাঁর তিন কর্মী আহত হয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. শাহীন জানিয়েছেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত ১৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে আটজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ভর্তি রয়েছেন।
মোংলা থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সহিংসতার চারটি পৃথক অভিযোগ পেয়েছেন। জড়িত সন্দেহে দু’জনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
গৌরনদী: রোববার রাত থেকে উপজেলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এ সময় ১২টি বসতঘর, ১৫টি মোটরসাইকেল, দুটি মিনিট্রাক ও একটি ট্রলি ভাঙচুর করা হয়েছে। বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেন মিয়া হামলার জন্য পরাজিত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছুর রহমানের ক্যাডারদের দায়ী করেন। হারিছের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh