অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: বিবিসি
কথায় আছে, সাফল্য অনেক প্রশ্ন ঢেকে দেয়, ব্যর্থতায় যা প্রকট হয়। ১০ বছর ধরে একের পর এক সাফল্য বিজেপির অভ্যন্তরের অনেক কিছু বাইরে আসতে দেয়নি। সরাসরি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়নি, নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর সিদ্ধান্ত ও কাজের ধরনকে। এবার দলের আসন এক ধাক্কায় ৩০৩ থেকে ২৪০–এ নেমে আসা, সরকার গড়তে গিয়ে শরিকদের গুরুত্ব দেওয়া এবং উত্তর প্রদেশে মুখ থুবড়ে পড়া—এসবে দলের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন ও কলহ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। শুরু হয়েছে একে অন্যের প্রতি দোষারোপের পালা। উঠেছে নাশকতার অভিযোগও।
এই পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদির ওপর ইতিমধ্যেই কোনো কোনো মহল চাপ সৃষ্টি করেছে, যাতে নতুন সরকারে অমিত শাহ আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না পান। উত্তর প্রদেশের বিজেপির একটি বড় অংশ রাজ্যে ভরাডুবির জন্য অমিত শাহর দিকেই আঙুল তুলেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছের নেতারা আবার ওই বিষয়ে দোষারোপ করছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে।
এটা ঠিক, ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বাছার সময় মোদি–শাহ জুটির প্রথম পছন্দ ছিলেন না যোগী আদিত্যনাথ। তাঁরা চেয়েছিলেন ওই রাজ্যের গাজীপুর থেকে নির্বাচিত মনোজ সিনহাকে দায়িত্ব দিতে, তখন যিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। মনোজকে সে কথা জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাদ সেধেছিল আরএসএস। সংঘের পছন্দই শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। মনোজকে পরে জম্মু–কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল করা হয়।
সেই অর্থে যোগী আদিত্যনাথ কোনো দিন মোদি–শাহর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের অংশ হননি। বরং দল ও রাজ্যের সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি বারবার স্বকীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। ফলে দিল্লির সঙ্গে তাঁর একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল শুরু থেকেই। এবার ভোটের ফল প্রকাশের পর যা আর চাপা নেই। খারাপ ফলের জন্য দুই শিবিরের ঘনিষ্ঠজনেরা প্রকাশ্যেই একে অপরকে দোষ দিয়ে চলেছেন। অবস্থার সামাল দিতে প্রদেশ সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধুরীকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
মোদি–শাহর সঙ্গে যোগীর সম্পর্ক যে তিক্ত, রাজনীতিকদের মধ্যে তা প্রথম প্রকাশ্যে আনেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ভোটের প্রচারের সময় তিনি দুটি কথা বলেন। এক, নরেন্দ্র মোদি তাঁর তৈরি নিয়ম মেনে ৭৫ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর দায়িত্ব দিয়ে যাবেন অমিত শাহর হাতে। দুই, একক ক্ষমতায় তৃতীয়বার সরকার গড়লে মোদি দুই মাসের মধ্যে সরিয়ে দেবেন যোগীকে, যেভাবে তিনি সরিয়ে দিয়েছেন রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে, মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহান, ছত্তিশগড়ে রমন সিংদের। বিস্ময়ের এটাই যে মোদির অবসর গ্রহণের বিষয়টি আকাশকুসুম কল্পনা বলে শাহ–নাড্ডারা উড়িয়ে দিলেও যোগী নিয়ে দলের কেউ একটি শব্দও ব্যয় করেননি। ভোটের প্রচারে দুই পক্ষের এই টানাপোড়েনের কাহিনি গোটা রাজ্যে চোরা স্রোতের মতো বয়েছে। ফল অস্বাভাবিক খারাপ হওয়ায় এখন তা আর মোটেই গোপন নেই। যোগীর অনুগামী স্থানীয় নেতারা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন অমিত শাহকে। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওতে তাঁরা বলছেন, অযোগ্যদের তিনি খেয়ালখুশিমতো প্রার্থী করেছেন। প্রার্থীপদ কেনাবেচা করেছেন। এমনকি এই অভিযোগও করা হচ্ছে, শাহ নাকি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন কেন্দ্র বারানসিকে তুলে দিয়েছেন গুজরাটি ব্যবসায়ীদের হাতে। এর পাল্টা মোদি–শাহ গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠরা দোষী ঠাওড়াচ্ছেন যোগীকে। অভিযোগ, যোগী হাত গুটিয়ে বসেছিলেন। যোগী নাকি চাননি ২০১৯ সালের মতো জনাদেশ নিয়ে মোদি ফের রাজত্ব করুন।
এবারের ভোট মোদির সম্মানে প্রবল ঘা দিয়েছে দুটি কেন্দ্রে। একটি তাঁর নিজের কেন্দ্র বারানসি, যেখানে প্রথম তিন রাউন্ড গণনায় মোদি পেছিয়ে ছিলেন। পরে জেতেন মাত্র দেড় লাখের ব্যবধানে। যেখানে ২০১৯–এ তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল প্রায় পাঁচ লাখ। দ্বিতীয় কেন্দ্রটি অযোধ্যা, যেখানে বিজেপি প্রার্থীকে হার মেনে নিতে হয়েছে সমাজবাদী প্রার্থীর কাছে। মোদি–শিবির এই বিপর্যয়ের দায় চাপাচ্ছে যোগীর ওপর। যোগী–শিবিরের পাল্টা দাবি, অযোধ্যার পুরো ভার তুলে দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রিন্সিপ্যাল সচিব নৃপেন্দ্র মিশ্রকে। বারানসির দায়িত্বে ছিলেন অমিত শাহ। দুই ক্ষেত্রের কোথাও যোগীর কোনো ভূমিকা ছিল না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh