পূর্ব নাগাল্যান্ডের ছয় জেলার ৪ লাখ ৬৩২ ভোটারের মধ্যে কেউ ভোট দেননি
লোকসভার প্রথম ধাপের ভোটে পূর্ব নাগাল্যান্ডের ছয় জেলায় ৪ লাখ ৬৩২ ভোটারের মধ্যে কেউ ভোট দেননি, যা রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম। পূর্ব নাগাল্যান্ডে পৃথক রাজ্যের দাবিতে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও)। ফলে বুথগুলোর অধিকাংশই খালি ছিল। এমনকি পূর্ব নাগাল্যান্ডের ২০ জন বিধায়কও ভোট দেননি। একইভাবে মণিপুরের কুকি এলাকায় ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন সংগঠন। ফলে বহু বুথে ভোটারই ছিল না।
নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও বলেন, নাগরিকেরা যা ভালো মনে করেছেন, তা-ই করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের তরফে নির্বিঘ্নে ভোটদানের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাজ্য সরকারও ইএনপিও-র সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছিল। আমরা এ নিয়ে কোনো সংঘাতে যেতে চাই না।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা অবশ্য দাবি করেন, দু–একজন ভোট দিয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু শতাংশের হিসাবে তা শূন্য। সুতরাং বলা যায়, ওই ছয় জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে শূন্য শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন অথবা কেউই ভোট দেননি। এটা ভারতে অতীতে কবে ঘটেছে, তা চট করে বলা সম্ভব নয়।
ভোট বর্জনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছয় জেলায় যে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল, বর্জন সফল হওয়ার পরে আজ শনিবার সকালে তা তুলে নেওয়া হয়েছে। যে সংগঠনের ডাকে ভোট বর্জন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল এবং তা সফলভাবে গতকাল শুক্রবার ভোটের দিন পালন করা হয়েছে, সেই সংগঠনের নাম ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও)। ইএনপিওর ডাকা কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছিল ছয় জেলার একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
পূর্ব নাগাল্যান্ডের যে ছয় জেলায় ভোট বর্জনের এমন অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো হচ্ছে কিপিরে, লংলেং, মোন, নকলাক, শামাটোর ও টুয়েনসাঙ। নাগাল্যান্ডের মোট ১৩ লাখ ২৫ হাজার ভোটারের মধ্যে ৪ লাখ ৬৩২ অর্থাৎ ৩০ শতাংশ ভোটার এই ছয় জেলার বাসিন্দা।
নাগাল্যান্ডের বিধানসভায় যে সরকার রয়েছে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সেই সরকারের প্রধান শরিক দল। ইএনপিও এক দশকের বেশি সময় ধরে নাগাল্যান্ডের ছয় অনুন্নত পূর্বাঞ্চলীয় জেলা নিয়ে একটি ভিন্ন প্রশাসনিক অঞ্চল ‘ফ্রন্টিয়ার নাগাল্যান্ড টেরিটরি’ (এফএনটি) গঠনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কার্যত এর অর্থ একটি ভিন্ন রাজ্য। ইএনপিও ওই অঞ্চলের সাতটি আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত একটি সার্বিক সংগঠন।
নাগাল্যান্ডের এই সাত আদিবাসী গোষ্ঠী হলো কনিয়াক, চাং, ইমখিয়াং, শ্যাংট্যম, ফোম, খিয়ামনিউনগান ও টিখির। এই ৬ জেলার সাত আদিবাসী গোষ্ঠী নাগাল্যান্ডের ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২০টিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। ইএনপিও দীর্ঘ এক দশক ধরে অনুন্নত পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোর জন্য আলাদা প্রশাসন ও সম্ভবত রাজ্যের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি তাদের তৎপরতা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। নাগাল্যান্ডের অন্য অঞ্চলের বিশেষত রাজধানী কোহিমাভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্রসংগঠনের নেতারা এই শক্তিবৃদ্ধির একটি ব্যাখ্যা প্রথম আলোকে অতীতে দিয়েছেন। এই ছাত্রসংগঠনের কিছু কিছু নেতা বর্তমানে নাগাল্যান্ডের বাইরে রয়েছেন। কারণ, তাঁদের বিরুদ্ধে নানা মামলা রাজ্যে চলছে।
এসব ছাত্রসংগঠনের এক নেতা সম্প্রতি মুম্বাই থেকে টেলিফোনে বলেন, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, নাগাল্যান্ড সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। কারণ, নাগাল্যান্ডের প্রধান বিচ্ছিন্নতাবাদী ও রাজনৈতিক শক্তি এনএসসিএনআইএম (ন্যাশনালিস্ট সোসালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড-আইজ্যাক মুইভা) ভারত সরকারের সঙ্গে ‘ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট’ সই করেছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে ভারত সরকার দেখতে পাচ্ছে, সেই সমস্যার সমাধান হয়নি। কারণ, এনএসসিএনের প্রধান দাবি তাদের পৃথক সংবিধান, পৃথক পতাকা ইত্যাদি থেকে সরে আসেনি।
এনএসসিএনআইএম এসব সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা, গত ১০ বছরে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এটা বুঝতে পেরে ঘুমিয়ে থাকা ইএনপিওকে জাগিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। ইএনপিওকে চাঙা করে এটা বোঝানোর চেষ্টা করে, নাগারা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজিত এবং এনএসপিএন যে দাবি তুলেছে, গোটা নাগাল্যান্ড সেই দাবিতে মোটেই সংঘবদ্ধ নয়। ফলে নাগাল্যান্ডের পৃথক পতাকা বা সংবিধান দেওয়া যাবে না। এখন ইএনপিও বুঝতে পেরেছে, তারা যথেষ্ট শক্তিশালী এবং মাথা তুলেছে। ইএনপিওর এই শক্তি বৃদ্ধির কারণেই গতকাল নাগাল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় ছয় জেলায় কেউই ভোট দিতে যাননি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
