গাজায় বিধ্বস্ত একটি মসজিদ
অন্য সময়ে শবে কদরের রাত ঘিরে ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল আকসায় এক ধরনের উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। কিন্তু চলতি বছরে গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় উৎসবের আমেজের বদলে আল আকসায় ছিল বেদনা ও বিষন্নতা। আল আকসায় ফিলিস্তিনি মুসলমানরা বেদনা ও উত্তেজনা নিয়ে রমজানের সবচেয়ে পবিত্র রাত (শবে কদরের রাত) পার করছে। পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার এবং পবিত্র শবে কদর অত্যন্ত উদ্বেগ, বেদনা আর অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে কাটাচ্ছেন ফিলিস্তিনবাসী। জেরুজালেমে এদিন মুসলমানদের জন্য পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদে ঢোকার পথ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েলি পুলিশ। সেখানে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায় তারা। আল আকসায় প্রবেশ নিয়ে মসুল্লি ও ইসরায়েলী পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
এ বছর পবিত্র এ জেরুজালেম শহরে রমজানের আলোকসজ্জা বা সাজসজ্জা চোখে পড়েনি। প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দিকে মঙ্গলবার বা বুধবার যে ঐতিহ্যবাহী ইফতারের আয়োজন করা হয়, এবার তা-ও হয়নি। এর পরিবর্তে ফিলিস্তিনবাসী তিতা কফি আর একটি খেজুর দিয়ে কোনোরকমে ইফতার করেছেন।
গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে স্বজন হারিয়েছেন ৫৪ বছর বয়সী সাবাহ। তিনি বলেন, ‘এ বছর মানুষের মনে কোনো উদ্যাপন নেই। এ বছরের ইফতারে কোনো মিষ্টি কিছু নেই। আমার মুখে সবকিছুই এখন তেতো মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমার পুরো পরিবারের জন্য এটা খুবই বেদনাদায়ক।’
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় এক লাখ ২০ হাজার লোক আল আকসায় প্রবেশ করে। এ সময়ে গ্রান্ড মুফতি মোহাম্মদ আহমাদ হুসেইন সাহসের সাথে সব মোকাবেলা করতে মুসুল্লিদের প্রতি আহ্বান জানান। চলমান গাজা যুদ্ধের কারণে আল আকসায় প্রচুর ইসরায়েলী পুলিশ মোতায়েন ছিল। জেরুজালেমের আদিল আল আঘা (৫৩) জানিয়েছেন, আল্লার মহিমা নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকা লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে ইসরায়েলি পুলিশ ছোট্ট ড্রোন মোতায়েন করে। টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করলে অনেকেই ফজরের সালাত আদায় না করেই আল আকসা থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়।
ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের তুলকারেম থেকে আসা ইয়াসের বাসার জানিয়েছেন, বৃদ্ধ ও তরুণদের পুলিশ আল আকসায় ঢুকতে দেয়নি। কেবল ৫৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং ৫০ এর বেশি বয়সী নারীদেরকেই আল আকসায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
আদনান জাফর (৬০) পুরনো এই শহরে মিষ্টি তৈরি করেন। সাধারণত রমজানে তার দোকানে ভিড় লেগেই থাকত। তিনি বলেন, এ বছরের মতো এরকম রমজান আমি আর দেখিনি। আমরা সকলেই জানি কেন- গাজা কেবল আমাদেরকেই নয়, পুরো বিশ্বকেই প্রভাবিত করেছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। আজ হামলার ছয় মাস পূর্তি হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে তাদের হামলায় সেখানকার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আশ্রয়হীন, ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ দিতেও বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যেই শুরু হয় পবিত্র রমজান মাস। গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৯১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
বিষয় : শবে কদর ফিলিস্তিনি মুসলমান
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh