গণপিটুনি। প্রতীকী ছবি
ভারতে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতা। বিশেষ করে বিদেশি বা ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের প্রতি ‘আদারিং’ এবং বিদ্বেষপ্রসূত সহিংসতার প্রবণতা এখন দেশটিতে এক স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে একাধিক পিটিয়ে হত্যার ঘটনা এবং বর্ণবাদী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’ একটি কড়া সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। সেখানে অবিলম্বে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বছরটি শেষ হতে যাচ্ছে এক চরম লজ্জা ও আতঙ্কজনক অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে। ভারতের তরুণ ও কর্মজীবী মানুষ এখন নিজের দেশে চলাফেরায় কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। উত্তরাখন্ডের দেরাদুনে ২৪ বছর বয়সী এক এমবিএ শিক্ষার্থীকে বর্ণবিদ্বেষী কটূক্তি করার পর ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনাটি এর একটি করুণ উদাহরণ। এক বছর ধরে সেই শহরে থাকা সত্ত্বেও তাকে ‘অচেনা’ বা ‘অন্য কেউ’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে চলতি মাসে ঘটে যাওয়া আরও দুটি রোমহর্ষক ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। ওডিশা এবং কেরালার ছত্তিশগড়ে দুজন বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের পরিচয় যা-ই হোক না কেন, ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে যেভাবে নির্বিচারে পিটিয়ে মারা হয়েছে, তা ভারতে প্রান্তিক শ্রমিকদের চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিকেই স্পষ্ট করে।
সম্পাদকীয়তে অভিযোগ করা হয়েছে যে, বছরের পর বছর ধরে চলা এসব বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধকে ভারত সরকার কখনো ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ স্বীকার করেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ একে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে দায় এড়িয়ে যায়। আফ্রিকান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এসবের পেছনে থাকা পদ্ধতিগত ‘আদারিং’ বা অন্যকে তুচ্ছ ভাবার মানসিকতার বিরুদ্ধে শক্ত কোনো আইনি কাঠামো দেখা যাচ্ছে না।
সম্পাদকীয়টি আরও মনে করিয়ে দেয় যে, ভারতীয় শিক্ষার্থীরা যখন বিদেশে (যেমন ট্রাম্পের আমেরিকায়) বর্ণবাদের শিকার হন, তখন ভারতবাসী ক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু নিজের দেশের ভেতরের বর্ণবাদ নিয়ে ভারত সরকার কেন চুপ?
সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘নীতি আয়োগ’ ২০৩০ সালের মধ্যে এক লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে ভারতে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে গায়ের রং বা ভিন্ন জাতির প্রতি ঘৃণা জিইয়ে রাখলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বলেই সম্পাদকীয়তে সতর্ক করা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুজব এবং রাজনৈতিক স্বার্থে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ জুজু ভারতের সাধারণ জনজীবনকে বিষিয়ে তুলছে। এই ‘পদ্ধতিগত বিষ’ নির্মূল করতে না পারলে অচিরেই ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একে অপর থেকে সুরক্ষার প্রয়োজন হয়ে পড়বে।
বিষয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভারত হামলা
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আলী হোসেন
যোগাযোগ: +880244809006 ,01922575574
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
