ভারতে ধর্মীয় উগ্রপন্থার ভয়াবহ রূপ ফুটে উঠেছে এবারের বড়দিনেও। উৎসব চলাকালে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ওপর অন্তত ৬০টি হামলা ও হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভারতের ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্সসহ একাধিক মানবাধিকার সংস্থা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
উৎসবে বাধা ও সহিংসতা
অলাভজনক সংস্থা ‘ওপেন ডোরস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বড়দিনের প্রস্তুতি এবং উৎসব চলাকালে ভারতজুড়ে গির্জা ভাঙচুর, সাজসজ্জা নষ্ট করা এবং উৎসবে আসা মানুষকে হুমকি দেওয়ার মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। বড়দিনের ‘ক্যারল’ গায়ক থেকে শুরু করে গির্জার প্রার্থনা সভায় আসা সাধারণ মানুষ—কেউই উগ্রপন্থীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। 'ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান ফোরাম'-এর দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরে ভারতে খ্রিস্টানদের ওপর হামলার মোট সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওতে নির্মমতার চিত্র
সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের জাবালপুরে। বড়দিনের উৎসবে যোগ দেওয়া এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী খ্রিস্টান নারীকে প্রকাশ্যে মারধর ও হেনস্তা করেন স্থানীয় বিজেপি নেত্রী আঞ্জু ভারগাভা। এই বর্বরতার ভিডিও ভাইরাল হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কংগ্রেস এই ঘটনাকে 'নির্মমতার উদাহরণ' বলে আখ্যা দিলেও অভিযুক্ত নেত্রী কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। চাপের মুখে বিজেপি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে।
এছাড়া দিল্লি ও ওড়িশায় বড়দিনের সাজে থাকা নারী ও সান্তা ক্লজের টুপি বিক্রেতাদের ওপর চড়াও হতে দেখা গেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী যুবকদের।
সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন
ভারতের ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স এক বিবৃতিতে বলেছে, বিনা প্ররোচনায় এসব আক্রমণ ভারতের সংবিধান প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে খর্ব করছে। সংগঠনটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ভারতে খ্রিস্টানরা তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান এই উগ্রবাদ তাদের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।