× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ইয়েমেন কি আবারও ভাগ হচ্ছে? নেপথ্যে আমিরাত-সৌদি দ্বৈরথ

ন্যাশনাল ট্রিবিউন ডেস্ক:

২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৯ পিএম । আপডেটঃ ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:০২ পিএম

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ইয়েমেনের এডেন শহর। ছবি: রয়টার্স

দীর্ঘ এক দশকের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত ইয়েমেনে বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। একদিকে হুতি বিদ্রোহী ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের মধ্যে বড় ধরনের বন্দিবিনিময় চুক্তির ইতিবাচক খবর, অন্যদিকে দেশটিকে দ্বিখণ্ডিত করে নতুন রাষ্ট্র গঠনের তৎপরতা—এই দুই বিপরীতমুখী স্রোতে এখন টালমাটাল আরব উপদ্বীপের দেশটি। অভিযোগের আঙুল উঠছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে, যা এই অঞ্চলে সৌদি আরবের একচ্ছত্র আধিপত্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি ওমানের রাজধানী মাসকাটে জাতিসংঘের ইয়েমেন বিষয়ক দূত হ্যান্স গ্রুডবার্গের মধ্যস্থতায় দুই সপ্তাহব্যাপী আলোচনার পর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় হুতি বিদ্রোহীরা ১,৭০০ জন এবং সরকারি পক্ষ ১,২০০ জন বন্দিকে মুক্তি দেবে। দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের পর এই বন্দিবিনিময়কে ভবিষ্যতের টেকসই শান্তির পথে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

শান্তি আলোচনার মাঝেই ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে এনেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি) দক্ষিণ ইয়েমেনকে একটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বর্তমানে দক্ষিণ ইয়েমেনের তেলসমৃদ্ধ আটটি প্রদেশ এবং প্রায় ১০ হাজার সেনার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এসটিসির হাতে। ১৯৯০ সালের আগে দক্ষিণ ইয়েমেন যেভাবে একটি পৃথক রাষ্ট্র ছিল, ঠিক সেই আদলেই আবারও মানচিত্র পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে এই গোষ্ঠী।

ইয়েমেন ভাগের এই প্রক্রিয়া শুধু দেশটির অখণ্ডতার জন্যই হুমকি নয়, বরং এটি সৌদি আরবের আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ। ইয়েমেনের বর্তমান ‘প্রবাসী সরকার’ সৌদি রাজধানী রিয়াদ থেকে পরিচালিত হয়। দক্ষিণ ইয়েমেন স্বাধীন হলে রিয়াদের প্রভাব যেমন খর্ব হবে, তেমনি ইয়েমেনের ওপর সৌদি আরবের ঐতিহাসিক নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণ ইয়েমেনের রাজধানী এডেনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে সৌদি সেনারা সরে যেতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

ইয়েমেন যুদ্ধবিধ্বস্ত হলেও এর ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। বিশ্ববাণিজ্যের ১২ থেকে ১৫ শতাংশ এবং সাগরে পরিবাহিত তেলের প্রায় ৯ শতাংশ ইয়েমেন উপকূলের লোহিত সাগর দিয়ে যায়। উত্তরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রাখা হুতিদের পেছনে ইরানের সমর্থন রয়েছে। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, ইয়েমেনে সোনা, রুপা ও গ্রানাইটের বিশাল মজুত রয়েছে। অতিসম্প্রতি তদন্তে উঠে এসেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র খনিজ সম্পদের বিনিময়ে দেশটিকে খাদ্য বা সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো ইয়েমেন বিভাজনের ঘোর বিরোধী। তারা চায় একটি ‘ফেডারেল কাঠামো’, যেখানে হুতিসহ সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তবে মাঠপর্যায়ের চিত্র ভিন্ন। আমিরাত সমর্থিত এসটিসি এখন গণভোটের পথে হাঁটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইতিহাস সাক্ষী, ১৯৬৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ইয়েমেন একটি পৃথক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ছিল। সেই পুরনো মানচিত্র কি আবার ফিরে আসবে, না কি সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় অখণ্ডতা বজায় থাকবে—তা এখন সময়ের অপেক্ষা।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006 ,01922575574

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.