নিহত জুয়েল রানা (বামে) এবং তার আধার কার্ড (ডানে), যা তার ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিলেও প্রাণ বাঁচাতে পারেনি। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ওড়িশা রাজ্যে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে জুয়েল রানা (১৯) নামে পশ্চিমবঙ্গের এক মুসলিম নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার রাতে সম্বলপুর জেলার আইন্থাপল্লী থানা এলাকায় এই নৃশংস গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। এ সময় জুয়েলের দুই সহকর্মী গুরুতর আহত হন, যারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে।
নিহত জুয়েল রানার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি ব্লকের চক বাহাদুরপুর গ্রামে। মাত্র পাঁচ দিন আগে কাজের সন্ধানে তিনি ওড়িশায় গিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও সহকর্মী পল্টু শেখ জানান, বুধবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ জুয়েলসহ তিনজন কাজ শেষে ঘরের বাইরে বিড়ি খাচ্ছিলেন। এমন সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক এসে তাদের কাছে বিড়ি চায়।
কথা বলার একপর্যায়ে তাদের ভাষা শুনে তারা 'বাংলাদেশি' কি না—এমন সন্দেহ প্রকাশ করে আধার কার্ড দেখতে চায়। একজন কার্ড আনতে ঘরে যাওয়ার আগেই উগ্রবাদী দলটি তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অভিযোগ উঠেছে, মারধরের সময় তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয় এবং জোরপূর্বক ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়।
সম্বলপুরের মহকুমা পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) তোফান বাগ জানিয়েছেন, "তিনজন শ্রমিক আধার কার্ড দেখানোর আগেই স্থানীয়রা তাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই জুয়েল রানার মৃত্যু হয়।" তিনি আরও জানান, নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং মুর্শিদাবাদে তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের মতে, সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী মুসলমানদের টার্গেট করার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের 'বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা' শনাক্তকরণ অভিযানের সুযোগ নিয়ে উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো সাধারণ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। ওড়িশায় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রবণতা আরও তীব্র হয়েছে।"
চলতি ডিসেম্বর মাসেই বিহার ও কেরালায় একই ধরনের সন্দেহের বশে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখতারুজ্জামান এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, "বাঙালি বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানদের টার্গেট করা একটি রাজনৈতিক এজেন্ডায় পরিণত হয়েছে। রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে ওড়িশা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।"
বিষয় : আইন শৃঙ্খলা ধর্ম ভারত মুসলমান
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006 ,01922575574
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
