রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে গতকাল শুক্রবার রাতে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালালে রাজধানী কিয়েভ অঞ্চলজুড়ে ছয় লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। শীতকাল শুরু হওয়ার আগেই বেসামরিক অবকাঠামোয় মস্কোর এই ধারাবাহিক হামলা ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ভোগান্তি সৃষ্টি করেছে।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) সকাল থেকে কিয়েভ অঞ্চল বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেবল রাজধানী কিয়েভেই পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। আশেপাশের অন্যান্য এলাকাও বিদ্যুৎ সংকটে ভোগান্তির শিকার।

ব্যাপক আক্রমণের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতি

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় রাশিয়া অন্তত ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৬০০ ড্রোন ব্যবহার করেছে। সামরিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করে এমন জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করেই এই আক্রমণ চালানো হয় বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। হামলায় এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত এবং অসংখ্য মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কিয়েভের মেয়র জানিয়েছেন, হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৩ বছরের একটি শিশুও রয়েছে।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী দাবি করেছে, তারা সফলভাবে ৫৫৮টি ড্রোন ও ১৯টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। জ্বালানি অবকাঠামোর পাশাপাশি রাতভর চালানো এই আক্রমণে কিয়েভের বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ সকালেও কিয়েভের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফ্ল্যাটে জরুরি উদ্ধারকর্মীদের কাজ করতে দেখা গেছে। কিয়েভের বিভিন্ন স্থাপনায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ডিটেক এনার্জি জানিয়েছে, তারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি পরিবারের বিদ্যুৎ-সংযোগ পুনঃস্থাপনে কাজ করছে।

শীতের আগে মস্কোর কৌশল ও বৈরী আবহাওয়ার পূর্বাভাস

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণের পর থেকেই রুশ বাহিনী প্রায় প্রতিদিনই কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। মূলত শীত মৌসুমের আগে ইউক্রেনের নাগরিকদের জীবনযাত্রা কঠিন করে তোলার কৌশল হিসেবে মস্কো জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে এই হামলা জোরদার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি শান্তিচুক্তি নিশ্চিতের প্রচেষ্টা চললেও রাশিয়া এই হামলা অব্যাহত রেখেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, কিয়েভে আগামীকাল রোববার তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে, যা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকা নাগরিকদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলবে।