রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
প্রায় চার বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ (ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে) থামাতে পর্দার আড়ালে একটি খসড়া শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার একাধিক কর্মকর্তা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস-এর এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পরিকল্পনার মূল শর্ত হলো— কিয়েভকে তাদের কিছু দখলকৃত ভূখণ্ড মস্কোর হাতে ছেড়ে দিতে হবে এবং নিজেদের সামরিক বাহিনীর আকার কমাতে হবে। যদিও এমন কোনো গোপন পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত থাকার কথা সরাসরি অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই অনানুষ্ঠানিক খসড়া পরিকল্পনাটি তৈরি করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ক্রেমলিনের উপদেষ্টা কিরিল দিমিত্রিয়েভ। মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে 'পর্দার আড়ালে যোগাযোগের' ভিত্তিতে এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসন এই পরিকল্পনায় কোনো সমর্থন জানিয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
অনানুষ্ঠানিক এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার দখলে থাকা কিছু ভূখণ্ড (যা মস্কো নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে) কিয়েভকে মস্কোর কাছে ছেড়ে দিতে হবে। এর পাশাপাশি, ইউক্রেনকে তার সামরিক বাহিনীর আকার ও কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে হবে। পরিকল্পনাটিতে কিয়েভের প্রতি মার্কিন সামরিক সহায়তা কমিয়ে আনার এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর নির্দিষ্ট ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত করার কথাও বলা হয়েছে।
তবে শুরু থেকেই যুদ্ধ থামাতে ভূখণ্ড বা অন্য কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার বিষয়টিকে কঠোরভাবে নাকচ করে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
হোয়াইট হাউস আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর এই গোপন পরিকল্পনা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে বুধবার (নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ নেই, ধরে নেওয়া হয়েছে নিকট অতীতের কোনো বুধবার) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'এক্স'-এ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, "টেকসই শান্তির জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া—দুই পক্ষকেই কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু ছাড় দিতে হবে। এ কারণেই যুদ্ধ থামাতে আমাদের সম্ভাব্য সব পরিকল্পনা তৈরি করে যেতে হবে।" এই মন্তব্য গোপন আলোচনার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্পষ্ট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন কোনো পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে না। বৃহস্পতিবার (নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ নেই, ধরে নেওয়া হয়েছে নিকট অতীতের কোনো বৃহস্পতিবার) রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাও একই কথা বলেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেন নিয়ে খসড়া কোনো পরিকল্পনা ওয়াশিংটনের কাছ থেকে মস্কো পায়নি এবং যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো পরিকল্পনা করলে তা অবশ্যই কূটনৈতিক চ্যানেলে রাশিয়ার কাছে পাঠাতে হবে।
এদিকে, যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা ফাঁস হওয়া নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে জল্পনা চলছে, ঠিক সেই সময়েই গত বুধবার কিয়েভ সফরে গেছেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা। এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর সচিব ড্যানিয়েল ড্রিসকোল। ইউক্রেনে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রতিনিধিরা যুদ্ধ থামাতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিসহ দেশটির সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন।
অন্যদিকে, শান্তি আলোচনার জল্পনা চললেও যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তেজনা বিন্দুমাত্র কমেনি। গত বুধবার রাতভর পশ্চিম ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ সামরিক বাহিনী। দেশটির তেরনোপিল শহরের বিভিন্ন বহুতল ভবন এবং গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলায় ৩ শিশুসহ অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ৭৩ জন আহত হয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
