ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী গাজায় মোতায়েন হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ)। ফাইল ছবি: রয়টার্স
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘদিনের হামাস-শাসিত এই ভূখণ্ডে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে আসা এই বহুজাতিক বাহিনীর কাঠামো ও ভূমিকা নিয়েই চলছে জোর আলোচনা।
ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাত নিরসনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব সোমবার (১৮ নভেম্বর) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদন লাভ করেছে। এই প্রস্তাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গাজাকে নিরাপদ রাখতে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) নামে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করা। এই বহুজাতিক বাহিনী গাজায় দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসা স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কাছ থেকে নিরাপত্তা ও সামাজিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বভার নিজেদের হাতে তুলে নেবে। মূলত যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন, গাজাকে অস্ত্রমুক্ত করা এবং নতুন একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়াই হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য। ট্রাম্পের প্রস্তাব ১৩-০ ভোটে পাস হলেও, রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ) একটি বহুজাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে। তাদের মূল দায়িত্বগুলো হলো:
যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়ন: গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঠিকঠাক বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেটির ওপর কঠোর নজর রাখা।
অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ: গাজা উপত্যকাকে সব ধরনের সশস্ত্র গোষ্ঠী থেকে অস্ত্রমুক্ত করা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখা।
সীমান্ত সুরক্ষা: ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে সমন্বয় করে গাজার সীমান্তগুলোকে সুরক্ষিত রাখা।
নতুন পুলিশ প্রশিক্ষণ: গাজার নিরাপত্তার জন্য একটি নতুন ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে গড়ে তোলা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া।
মানবিক কার্যক্রম ও বেসামরিক সুরক্ষা: বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়া এবং মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করা।
তাত্ত্বিকভাবে, এই বাহিনী ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
আইএসএফ-এর চূড়ান্ত রূপরেখা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, এটি মিসর ও ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে এবং নতুন প্রশিক্ষণ পাওয়া পুলিশ বাহিনী তাতে সহায়তা করবে। ট্রাম্পের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি দেশ বাহিনীতে সেনা পাঠানোর আগ্রহ দেখিয়েছে:
আগ্রহী দেশ: আজারবাইজান ও ইন্দোনেশিয়া।
আলোচনায় থাকা আরব রাষ্ট্র: মিসর, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ার গারগাশ এই বাহিনীতে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সম্ভাব্য নেতৃত্ব: বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই বহুজাতিক বাহিনীটির নেতৃত্ব দিতে পারে মিসর।
গত অক্টোবরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গাজায় সহায়তা করতে তাঁর দেশের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিলেন। তবে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে, ইসরায়েলের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেয়ন সার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন—গাজার ভূখণ্ডে তুরস্কের কোনো সেনাসদস্যের উপস্থিতি তাঁর দেশ মেনে নেবে না।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ট্রাম্পের প্রস্তাবটি ১৩-০ ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল। তাদের এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ ছিল:
ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি: প্রস্তাবে আইএসএফ-এ ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ।
জাতিসংঘের ভূমিকার অস্পষ্টতা: গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে জাতিসংঘের স্পষ্ট ভূমিকার উল্লেখ না থাকা।
এর আগে রাশিয়া গাজা নিয়ে নিজস্ব একটি প্রস্তাব দিয়েছিল, যেখানে বাহিনীতে অংশগ্রহণকারী দেশ নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবের যুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছিল।
হামাস ট্রাম্পের এই পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে। টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদের এই ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকার ওপর একটি আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসের হাতে দুটি বিকল্প থাকবে: হয় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সহাবস্থান, নয়তো নিরাপদে উপত্যকাটি ছেড়ে যাওয়া। যদিও হামাস গাজার শাসনভার ছাড়তে রাজি, তবে অস্ত্র ছাড়ার বিষয়টি তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েল মূলত হামাসকে অস্ত্রমুক্ত করার দিকে নজর দিচ্ছে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেছেন, তাঁর দেশ হামাসের নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তবে ইসরায়েলের কট্টর জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক ও ইসরায়েল বেইতেনু পার্টির প্রধান আভিগদোর লিবারম্যান সরকারের সমালোচনা করে এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “জাতিসংঘে যা ঘটেছে, তা ইসরায়েল সরকারের ব্যর্থতার ফল। এর জেরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হবে, সৌদি আরবে পরমাণু প্রকল্প চালু হবে এবং তুরস্ক ও সৌদি আরব এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে।”
বিষয় : যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল গাজা ফিলিস্তিন
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
