ভারতের একটি সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান। ফাইল ছবি: রয়টার্স
বিদেশে অবস্থিত নিজেদের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সামরিক ঘাঁটিটি নীরবে ছেড়ে দিয়েছে ভারত। তাজিকিস্তানের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিমানঘাঁটি থেকে তিন বছর ধরে ধাপে ধাপে সেনা সদস্য ও সামরিক সরঞ্জাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে দিল্লি। খবরটি এত দিন গোপন থাকলেও, গত মাসেই নিশ্চিত হওয়া যায় যে মধ্য এশিয়ার এই ঘাঁটিতে ভারতের আর কোনো সামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না।
দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত এই ঘাঁটিটি তৈরি ও পরিচালনা করেছিল। এটি শুধু বিদেশে ভারতের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সামরিক ঘাঁটিই ছিল না, বরং মধ্য এশিয়ায় দিল্লির সামরিক উপস্থিতি জোরদার করার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ও প্রভাবশালী শক্তিধর রাশিয়া-চীনের প্রভাববলয়ে কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের সুযোগ এনে দিয়েছিল।
তাজিকিস্তানের কৌশলগত স্থানে অবস্থিত আইনি বিমানঘাঁটি ভারতের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সকে সহায়তা করতে ভারত প্রথম এখানে সেনা মোতায়েন করেছিল। এমনকি, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান কাবুল দখল করার পরও এই ঘাঁটি ব্যবহার করেই আফগানিস্তান থেকে নিজেদের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে এনেছিল ভারত।
এই ঘাঁটির অবস্থানও ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই করিডরটি পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের সঙ্গে সীমানা ভাগ করে নিয়েছে।
সাবেক সোভিয়েত আমলে শুরু হওয়া এই বিমানঘাঁটি ইউনিয়নের পতনের পর করুণ দশায় পড়েছিল। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারত এটিকে সংস্কার করে আধুনিকায়ন করে তোলে। এ জন্য প্রায় ৮ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছিল।
২০০২ সালে তাজিক সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ভারত রানওয়ে মেরামত ও উন্নয়ন করে এটিকে যুদ্ধবিমান ও ভারী মালবাহী উড়োজাহাজ ওঠানামার উপযোগী করে তোলে। সংস্কারের মধ্যে ছিল হ্যাঙ্গার, জ্বালানি ডিপো এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা নির্মাণ। একসময় ভারত এখানে প্রায় ২০০ সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্য, সঙ্গে কয়েকটি সুখোই–৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছিল।
তাজিক সরকারের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালে। ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, চুক্তির মেয়াদ শেষে অবকাঠামো তাজিকিস্তান সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে অভ্যন্তরীণ সূত্র অনুযায়ী, ভারত বুঝতে পারছিল যে রাশিয়া ও চীনের প্রবল চাপের কারণে তাজিকিস্তান সরকার বিমানঘাঁটি নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি নবায়নে অনিচ্ছুক। এই ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার কারণেই ভারত নীরবে ও ধীরে ধীরে নিজেদের উপস্থিতি প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করে, যা গত মাসে প্রকাশ্যে আসে।
আইনি বিমানঘাঁটি থেকে ভারতের উপস্থিতি প্রত্যাহার দেশটির জন্য এক বড় কৌশলগত ধাক্কা।
১. কৌশলগত সুবিধা হারানো: এই ঘাঁটি ভারতের জন্য মধ্য এশিয়ায় কেবল সামরিক উপস্থিতিই নিশ্চিত করত না, বরং দীর্ঘ মেয়াদে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করত।
২. ওয়াখান করিডর: এর অবস্থান ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওয়াখান করিডরের কাছে, যা চীন ও পাকিস্তানের জন্য ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। বিদেশের মাটিতে সামরিক ঘাঁটি কোনো দেশের জন্য শুধু সেই দেশে নয়, প্রতিবেশী অঞ্চলগুলোতেও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে এমন একটি ঘাঁটির অনুপস্থিতি ভারতের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে শূন্যতা তৈরি করতে পারে।
যদিও কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভারতের সামরিক সহায়তা চুক্তি রয়েছে, তবুও গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্য মানবসম্পদ ও অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে তৈরি করা আইনি বিমানঘাঁটির মতো পূর্ণাঙ্গ কার্যকর বিদেশি সামরিক ঘাঁটি আর একটিও নেই।
বিষয় : তাজিকিস্তান ভারত আফগানিস্তান
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
