ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে রাশিয়ার ব্যাপক হামলার পর দেশটিতে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল। এর জেরে আজ রোববার (নভেম্বর ১০) ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎবিভ্রাটের সতর্কতা জারি করেছে দেশটির বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ইউক্রেনেরর্গো। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই হামলার পর ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ‘শূন্যের’ কোঠায় নেমে এসেছে।

গত কয়েক মাসে ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে মস্কো শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত কয়েক শ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন।

ইউক্রেনেরর্গো জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ অবকাঠামো মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে এবং বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। গত শনিবার (নভেম্বর ৯) ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী ভিতলানা গ্রিনচুক জানান, কিয়েভ, নিপ্রোপেত্রাভস্ক, দোনেৎস্ক, খারকিভ, পলতাভা, চেরনিহিভ ও সুমিতে সরবরাহ কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। তবে নিয়মিত বিদ্যুৎবিভ্রাট সেখানে বহাল থাকবে।

স্থানীয় টেলিভিশন ইউনাইটেড নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভিতলানা গ্রিনচুক বলেন, "শত্রুরা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এটি প্রতিহত করা খুব কঠিন। আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর এমন হামলা হয়নি।"

রুশ ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিয়া। তিনি এ ঘটনায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আন্দ্রি সিবিয়া তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন, "রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকির জবাব দিতে আমরা আইএইএর গভর্নর বোর্ডের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানাচ্ছি।" হামলা বন্ধে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীন ও ভারতের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন। এই দেশ দুটি রাশিয়ার জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হিসেবে পরিচিত।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলার কারণে শীতের আগে ইউক্রেনের তাপ সরবরাহ ব্যবস্থা চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। দেশটির শীর্ষ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ওলেকজান্দ্রা খারচেঙ্কো সতর্ক করে বলেছেন, তাপমাত্রা যখন হিমাঙ্কের ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসবে, তখন কিয়েভের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তাপকেন্দ্র তিন দিনের বেশি বন্ধ থাকলে রাজধানীতে ‘প্রযুক্তিগত বিপর্যয়’ তৈরি হবে।