মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে গত দু'দিনে বড়সড় ধাক্কা খেলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবারের স্থানীয় নির্বাচনে তাঁর দলের পরাজয় এবং বুধবার সুপ্রিম কোর্টে তাঁর জরুরি ক্ষমতা নিয়ে বিচারকদের সন্দেহ প্রকাশ—এই দুই ঘটনায় হোয়াইট হাউসের প্রধানের বেপরোয়া ক্ষমতাচর্চা কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
চলতি বছরের শুরু থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশ–বিদেশে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা বহু রীতিনীতি তছনছ করে দিয়েছেন। বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু, মিত্রদের দূরে ঠেলে দেওয়া, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে সেনা মোতায়েন ও সরকারি দপ্তরগুলোর ওলট–পালট করা—একের পর এক আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। তবে, তাঁর সেই ‘একচ্ছত্র’ ক্ষমতার দাপট অবশেষে কিছুটা হলেও থমকেছে।
মাত্র দু'দিনের ব্যবধানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ট্রাম্পের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। প্রথমত, গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা বড় জয় পেয়েছেন। নিউইয়র্কের মেয়র হওয়া থেকে জোহরান মামদানিকে ঠেকাতে ট্রাম্প ব্যাপক কূটকৌশল চালালেও সফল হননি। এছাড়াও, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সিতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আবিগালি স্প্যানবার্গার ও মিকি শেরিলের জয় রিপাবলিকানদের জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। যদিও এই এলাকাগুলোয় ডেমোক্র্যাটদের প্রভাব বেশি, তবু এমন বড় জয় দলের নেতাদের মনোবল কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই জয়ের আগে থেকেই অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গাভিন নিউসম ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘ভালুককে খোঁচা দিলে সে গর্জন করে রুখে দাঁড়াবেই।’ ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিটজকারও ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করেছেন।
দ্বিতীয় ধাক্কাটি আসে বুধবার মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট থেকে। বিচারকেরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে সংবিধান ট্রাম্পকে যে জরুরি ক্ষমতা দিয়েছে, তা ব্যবহার করে তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করতে পারেন কি না। এর আগে ট্রাম্পের ভুল ধারণা ছিল যে সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তিনি যেকোনো সরকারি কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি পাবেন। গত আগস্টে তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছিলেন, ‘আমি যা চাই, তার সবকিছু করার অধিকার আমার আছে।’
তবে, শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতার ব্যবহার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অসন্তুষ্টি তাঁর সেই ভুল ধারণা ভেঙে দিয়েছে। বিচার বিভাগের এই হস্তক্ষেপ সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ওপর নজরদারির বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে ট্রাম্পের ক্ষমতাচর্চা কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ‘অগাধ’ হলেও ট্রাম্পের মতো আর কোনো প্রেসিডেন্টই হোয়াইট হাউসকে রাজদরবার মনে করেননি। রিপাবলিকান কংগ্রেসে তাঁর এতটাই নিয়ন্ত্রণ ছিল যে আগ্রাসী ক্ষমতাচর্চার ওপর নজরদারি করার কেউ ছিল না। ট্রাম্পের জীবনের মন্ত্রই হলো—সব বাধার জবাব দিতে হবে আগ্রাসীভাবে।
সে হিসেবে মঙ্গলবারের ডেমোক্র্যাটদের জয়ের জবাবও আগ্রাসীভাবে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প। মামদানির জয়ের আগেই তিনি নিউইয়র্কে কেন্দ্রীয় তহবিল কমানোর হুমকি দিয়েছেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের কথা বলেছেন। তিনি সময়ের আগেই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মানচিত্র পুননির্ধারণেরও চেষ্টা করছেন।
তবে, সাম্প্রতিক কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, মার্কিনরা ট্রাম্পের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন। তাঁরা মনে করছেন, ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে এবং অর্থনীতিও নড়বড়ে। কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনের ফল দিয়ে ভবিষ্যতের সবটা নির্ধারণ না হলেও মঙ্গলবারে ডেমোক্র্যাটদের জয় এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচন রিপাবলিকানদের জন্য সহজ হবে না।
বিষয় : যুক্তরাষ্ট্র ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচন রাজনীতি
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
